সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজ-বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা
সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত সম্পর্কে কি জানতে চান? আজকের আর্টিকেলে আমরা সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের সুযোগ, মাসিক আয়, অতিরিক্ত সুবিধা, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং কোন কাজের চাহিদা বেশী সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্রঃ সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত
-
সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত
- সৌদি আরবের কোন কাজের চাহিদা বেশি
- সৌদি আরবে কাজের জন্য যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কর্মীদের অতিরিক্ত সুবিধা ও বোনাস
- যে সকল শহরে ইলেকট্রিক কাজের বেশি সুযোগ আছে
-
সৌদি আরব ড্রাইভিং ভিসা বেতন কত
- সৌদি আরব হোটেল ভিসা বেতন কত
-
সৌদি আরব ক্লিনার ভিসা বেতন কত
- ইলেকট্রিক কাজের ঝুঁকি এবং সতর্কতা বিষয়ক টিপস
- সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
- লেখকের মন্তব্যঃ সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত
সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত
সৌদি আরবের কোন কাজের চাহিদা বেশি
-
কনস্ট্রাকশন এর কাজঃ সৌদি আরবে একটি প্রকল্প সৌদি
ভিশন-২০৩০ এর কারণে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সেখানে প্রচুর পরিমাণে নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই আপনি
যদি কনস্ট্রাকশনের কাজে সৌদি আরব যেতে চান তাহলে খুব সহজে কাজ পেয়ে
যাবেন।
- ইলেকট্রিক কাজঃ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দক্ষ ইলেকট্রিক কর্মীর চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। তাই আপনি যদি ইলেকট্রিক কাজের দক্ষ হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজ করে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
- ড্রাইভারঃ প্রাইভেট গাড়ি, ট্রাক, বাস ড্রাইভার সব সেক্টরে দক্ষ ড্রাইভারের প্রচুর চাহিদা আছে। তাই আপনি যদি ড্রাইভিং ভালো হয়ে থাকেন এবং আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ড্রাইভার হিসেবে সৌদি আরবে গেলে লাভবান হবেন।
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট স্টাফঃ ওয়েটার, কুক, ক্লিনার, রিসেপশনিস্ট, হাউসকিপার ইত্যাদি কাজ ট্যুরিজম বাড়ার কারণে সৌদি আরবে এইসব কাজের চাহিদা বেড়েছে। তাই আপনি যদি কোন কাজে দক্ষ না হয়ে থাকেন তাহলে এই সকল কাজ করতে পারেন।
- সিকিউরিটি গার্ডঃ সৌদি আরবে সিকিউরিটি গার্ডের অনেক চাহিদা রয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, শপিং মল, আবাসিক প্রকল্পে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
- টেকনিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিশেষ করে বড় প্রকল্পগুলোর জন্য এসব খাতে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
- ক্লিনার ও মেইনটেন্যান্স স্টাফঃ আপনি যদি সৌদি আরবে নতুন গিয়ে থাকেন এবং কোন কাজে দক্ষ না হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি হোটেল, হাসপাতাল, অফিস ইত্যাদিতে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
সৌদি আরবে কাজের জন্য যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
-
কমপক্ষে এক বছর মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
-
সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
- কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- করোনা টিকা সনদ কপি
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ার সার্টিফিকেট
- সৌদি আরবে কাজের পারমিট ভিসা
সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা
- ওয়্যারিং এবং ইন্সটলেশন কাজ দক্ষতার সাথে করতে জানা।
- ইলেকট্রিক ডায়াগ্রাম পড়তে এবং বুঝতে পারা।
- ট্রাবলশুটিং এবং রিপেয়ারিং দক্ষতা থাকতে হবে।
- টুলস ও যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারা।
- সেফটি মেজার (Safety Rules) জানা ও মেনে চলার অভ্যাস থাকা।
সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কর্মীদের অতিরিক্ত সুবিধা ও বোনাস
- বেশিরভাগ কোম্পানি কর্মীদের জন্য ফ্রি আবাসন এবং ফ্রি খাবার বা খাবারের ভাতা প্রদান করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাসা ভাড়া বাবদ House Allowance-ও দেওয়া হয়।
- কর্মীদের জন্য কোম্পানি থেকে ফ্রি যাতায়াত ব্যবস্থা থাকে। যেমন-কার, বাস সার্ভিস। বড় প্রকল্পে আলাদা পিক-ড্রপ বা আনা নেওয়ার সুবিধা থাকে।
- কাজের সময়ের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করলে ওভারটাইম বা বিশেষ হারে বেতন (১.৫ গুণ বা তার বেশি) প্রদান করা হয়।
- ফ্রি মেডিকেল ট্রীটমেন্ট বা হেলথ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া হয়। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা এমার্জেন্সি চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যায়।
- নির্দিষ্ট সময় (মাঝে মাঝে ২ বছর বা ১.৫ বছর পর) কাজ শেষ হলে ফ্রি রিটার্ন এয়ার টিকিট দিয়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা থাকে। অনেকে ছুটি শেষে আবার নতুন কনট্রাক্টে ফিরে যান।
- কিছু কোম্পানি বছরে একবার পারফরমেন্স বোনাস প্রদান করে। চাকরি শেষে নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ করলে এককালীন কিছু বেনিফিট বা টাকা পাওয়া যায়।
- অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট ফ্রি করে দেয় এবং নিয়মিত নবায়ন করে। ভালো কর্মীদের ভিসা রিনিউয়াল এবং স্পনসরশিপ ট্রান্সফার সুবিধাও দেওয়া হয়।
যে সকল শহরে ইলেকট্রিক কাজের বেশি সুযোগ আছে
সৌদি আরবে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে সৌদি আরবে ইলেকট্রিক কাজের বেতন কত এবং কোন কোন শহরে কাজের বেশি সুযোগ রয়েছে তা সম্পর্কে জানতে হবে। রিয়াদ হলো এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কেন্দ্র, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি অনেক মেগা প্রজেক্ট চলছে, ফলে ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ানদের জন্য কাজের বিশাল চাহিদা আছে। একইভাবে, জেদ্দা শহরেও নতুন বিল্ডিং, শপিং মল এবং রেস্তোরাঁ তৈরি হওয়ায় ইলেকট্রিক কর্মীদের নিয়োগ অনেক বেশি। ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর মক্কা ও মদিনাতেও হোটেল, আবাসন প্রকল্প এবং মসজিদ মেইনটেন্যান্সে ইলেকট্রিক কাজের সুযোগ প্রচুর।
ইস্টার্ন প্রদেশের দাম্মাম এবং খোবার শহরগুলিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ও বড় বড় কোম্পানির কারণে ইলেকট্রিক মেইনটেন্যান্স এবং ইন্সটলেশনের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া ইয়ানবু শহরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকল্পে এবং সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মেগা সিটি নিওমে ইলেকট্রিক কাজের জন্য প্রচুর লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এসব শহরে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানরা উচ্চ বেতন এবং ভালো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। আপনাদের সুবিধার্থে নিজে শহরগুলির নাম দেওয়া হল-
- রিয়াদ (Riyadh)
- জেদ্দা (Jeddah)
- মক্কা ও মদিনা (Makkah & Madinah)
- দাম্মাম (Dammam)
- খোবার (Al Khobar)
- ইয়ানবু (Yanbu)
- নিওম সিটি (NEOM City)
সৌদি আরব ড্রাইভিং ভিসা বেতন কত
সৌদি আরবে ড্রাইভিং ভিসায় কাজের বেতন সাধারণত ১২০০ থেকে ২৫০০ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে। যাঁরা লাইট ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন, তাদের বেতন শুরুতে প্রায় ১২০০ থেকে ১৮০০ রিয়ালের মধ্যে হয়। আর যদি কেউ হেভি ড্রাইভার, ট্রাক বা লরি চালানোর কাজ করেন, তাহলে বেতন আরও কিছুটা বেশি হয়, যা ২০০০ থেকে ৩০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। তবে ঠিক কত বেতন পাবেন, তা নির্ভর করে কোন কোম্পানিতে কাজ করবেন, আপনার অভিজ্ঞতা কেমন, আর কাজের ধরন কেমন তার উপর।
অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি থাকা-খাওয়া ফ্রি দেয়, আবার কিছু কিছু কোম্পানিতে ওভারটাইম কাজের সুযোগও থাকে, যার মাধ্যমে বাড়তি ইনকাম করা সম্ভব। পাশাপাশি বছরে একবার ছুটি ও ফ্রি এয়ার টিকিট সুবিধাও অনেক কোম্পানি দেয়। যদি আপনি ভালোভাবে গাড়ি চালাতে জানেন, নিয়ম-কানুন মানেন, আর একটু ধৈর্য ধরে কাজ করেন, তাহলে সৌদি আরবে ড্রাইভিং ভিসায় ভালো বেতন ও সুবিধা নিয়ে সুন্দর জীবন গড়ে তোলা সম্ভব।
সৌদি আরব হোটেল ভিসা বেতন কত
সৌদি আরবে হোটেল ভিসায় যারা কাজ করেন, তাদের বেতন সাধারণত কাজের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন হয়। যদি আপনি হাউসকিপিং, বয় বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, তাহলে শুরুতে বেতন প্রায় ১২০০ থেকে ১৬০০ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। আবার যদি আপনি রিসেপশনিস্ট, কুক (রাঁধুনি), বা সুপারভাইজারের মতো একটু ভালো পজিশনে কাজ করেন, তাহলে বেতন কিছুটা বেশি হয়, প্রায় ১৮০০ থেকে ২৫০০ রিয়াল বা তারও বেশি হতে পারে। অনেক হোটেলে থাকা-খাওয়ার সুবিধা ফ্রি থাকে, তাই নিজের খরচ তেমন একটা করতে হয় না।
অনেক সময় ভালো কাজ করলে কোম্পানি ওভারটাইম ইনকাম, বোনাস বা ছুটির সময় ফ্রি টিকিটের সুবিধাও দেয়। কাজের চাপ কিছুটা বেশি থাকলেও, হোটেল লাইনের অভিজ্ঞতা থাকলে এখানে একটা ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ আছে। সবশেষে বলবো, যদি মন থেকে পরিশ্রম করতে পারেন, তাহলে সৌদি আরবে হোটেল ভিসায় কাজ করে ভালো টাকা জমানো সম্ভব।
সৌদি আরব ক্লিনার ভিসা বেতন কত
সৌদি আরবে ক্লিনার ভিসায় কাজ করলে সাধারণত বেতন শুরুতে ৯০০ থেকে ১২০০ সৌদি রিয়ালের মধ্যে হয়। কেউ কেউ একটু অভিজ্ঞ হলে বা ভালো কোম্পানিতে কাজ পেলে ১৩০০ বা ১৫০০ রিয়াল পর্যন্তও পেতে পারেন। তবে বেতনের পাশাপাশি বেশিরভাগ কোম্পানি থাকা ও খাওয়ার সুবিধা ফ্রি দেয়, তাই নিজের ব্যক্তিগত খরচ খুব কম হয়।
অনেক কোম্পানিতে কাজের ঘণ্টা নির্দিষ্ট থাকে, আর যদি অতিরিক্ত কাজ করতে পারেন, তাহলে ওভারটাইম ইনকামও হয়, যেটা আলাদা করে মাস শেষে বেতনের সাথে যোগ হয়। ক্লিনার কাজ অনেক সময় সহজ মনে হলেও, পরিশ্রম করতে হয়, নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তবে মন দিয়ে কাজ করলে সৌদি আরবে ক্লিনার ভিসায়ও সম্মানজনকভাবে ভালো টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে নিজের একটা সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করা সম্ভব।
ইলেকট্রিক কাজের ঝুঁকি এবং সতর্কতা বিষয়ক টিপস
- সব সময় কাজ শুরুর আগে মেইন সুইচ বন্ধ করুন। বিদ্যুৎ চলমান অবস্থায় কখনো সরাসরি তার বা যন্ত্রাংশ ছুঁবেন না।
- নিরাপদ এবং ভালো মানের টুলস ব্যবহার করুন। ভাঙা বা পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবেন না, এতে ঝুঁকি বাড়ে।
- প্রয়োজনে রাবারের গ্লাভস ও ইনস্যুলেটেড জুতা ব্যবহার করুন। এতে শরীরে বিদ্যুতের প্রবাহ রোধ হয় এবং নিরাপদ থাকা যায়।
- ভেজা হাতে বা ভেজা মেঝেতে দাঁড়িয়ে ইলেকট্রিক কাজ করবেন না। পানি ও বিদ্যুৎ একসাথে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- কাজের সময় আশপাশ পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখুন। যেন হঠাৎ কোনো তার বা যন্ত্রপাতি পায়ে প্যাঁচিয়ে না যায়।
- কখনোই নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে বড় ইলেকট্রিক কাজ করবেন না। যদি কাজ জটিল মনে হয়, তাহলে অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্য নিন।
- সবসময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেয়ার চেষ্টা করুন। এতে বিপদের সময় কীভাবে রক্ষা পেতে হয় তা জানা থাকে।
বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url