পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক- ভুল ব্যবহার ডেকে আনতে পারে ক্ষতি
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। পাথরকুচি পাতা প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে পরিচিত হলেও এর ভুল ব্যবহার আপনার শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেকেই জানেন না যে এই সবুজ পাতার ভেতর লুকিয়ে আছে কিছু মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
সঠিক জ্ঞান ছাড়া নিয়মিত সেবন শরীরে তৈরি করতে পারে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর সাইট গুলো, সতর্কতা ও ব্যবহারবিধি। তাই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃ পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
-
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
-
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
-
পাথরকুচি খাওয়ার নিয়ম
-
পাথরকুচি পাতার ব্যবহার
-
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
- পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়
-
লেখকের মন্তব্যঃ পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
- যদি অতিরিক্ত পরিমাণে পাথরকুচি পাতা খাওয়া হয়, তাহলে গ্যাস্ট্রিক, অম্বল কিংবা পেটের গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি হজমশক্তিকে প্রভাবিত করে এবং বদহজমের কারণ হতে পারে।
- যদিও এই পাতা কিডনির পাথর নির্গমনে সহায়তা করে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়ায়।
- যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক বা নিম্ন পর্যায়ে থাকে, তারা যদি নিয়ম ছাড়া পাথরকুচি পাতা খান তাহলে রক্তচাপ আরও নিচে নেমে যেতে পারে। যা পরবর্তীতে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের ভেষজ উপাদান গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ পাথরকুচি পাতার কিছু উপাদান গর্ভের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- সব মানুষের শরীরে একভাবে প্রতিক্রিয়া নাও হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার পর ত্বকে চুলকানি, র্যাশ বা শ্বাসকষ্টের মতো অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
- কিডনির পাথর নির্গমনে সহায়কঃ পাথরকুচি পাতা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির পাথর ভাঙার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত সেবনে এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে ছোট পাথর বের করে দিতে সাহায্য করতে পারে।
- ঘা ও কাটা জায়গায় প্রাকৃতিক ওষুধঃ পাতাটি থেঁতো করে সরাসরি ক্ষতস্থানে লাগালে ঘা শুকাতে সাহায্য করে এবং জীবাণুর সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও কাজ করে।
- সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা দূর করেঃ উষ্ণ পানি বা মধুর সঙ্গে পাথরকুচি পাতা সেবন করলে সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা উপশমে কার্যকর প্রভাব ফেলে। এটি গলা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
- অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে উপকারীঃ এই পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ফুসফুসের প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে সাহায্য করে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে এটি উপকারী হতে পারে।
- জ্বর ও ম্যালেরিয়ায় সহায়কঃ প্রাচীন সময়ে ম্যালেরিয়া বা ভাইরাল জ্বরে পাথরকুচি পাতা সেদ্ধ করে খাওয়ানো হতো। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ এই ছাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে অর্থাৎ যাদের পেশার সবসময় বেশি থাকে তারা পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন।
-
জন্ডিস নিরাময়ঃ জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পাথরকুচি পাতার
রস অনেক উপকারী। তাই আপনি যদি জন্ডিসের আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে
অবশ্যই পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন।
-
মৃগী রোগ নিরাময়ঃ মৃগী রোগ নিরাময়ে পাথরকুচি পাতার রস ৬ থেকে
১০ ফোঁটা আক্রান্ত ব্যক্তিকে খেতে দিতে পারেন। দেখবেন দ্রুত সুস্থ
হবে।
-
পাইলস রোগ নিরাময়ঃ তাদের পাইলস রোগের সমস্যা রয়েছে তারা
পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করতে পারেন। ভালো উপকার
পাবেন।
-
ত্বকের যত্নঃ পাথরকুচি পাতা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। মুখের
ব্রণ ও ফুসকুড়ি সমস্যার দূর করতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে পাথরকুচি
পাতা পেস্ট করে ত্বকে লাগাতে পারেন।
পাথরকুচি পাতার অপকারিতা
-
পাথরকুচি পাতার রস বেশি পরিমাণ খেলে পিত্তথলির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেকেই ভাবেন, প্রাকৃতিক জিনিস বেশি খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত খেলে পেট ব্যথা, ঢেকুর বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা শরীরের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- যদিও এটি কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে, কিন্তু প্রতিদিন বা অতিরিক্ত খেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে। বিশেষ করে যাদের কিডনি আগে থেকেই দুর্বল, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
-
বেশি পরিমাণে পাথরকুচি পাতা খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
- পাথরকুচি পাতার কিছু উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি কারো প্রেসার আগে থেকেই কম থাকে, তাহলে এটা আরও কমিয়ে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে।
- গর্ভবতী নারীরা অনেক সময় স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে ভেষজ পাতা খেয়ে ফেলেন। কিন্তু পাথরকুচি পাতা গর্ভের শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
-
পাথরকুচি পাতার রস প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে ক্ষুধা মন্দা হতে পারে।
- সব ভেষজ উপাদান সবার শরীরে একভাবে কাজ করে না। কারও কারও শরীরে এটি খেলে চুলকানি, র্যাশ বা ত্বকে লাল দাগ দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্টও হতে পারে যদি অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে।
পাথরকুচি খাওয়ার নিয়ম
পাথরকুচি পাতার ব্যবহার
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতার রস একটি শক্তিশালী ভেষজ তরল। যা শরীরের ভেতরকার সমস্যাগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে সারাতে সাহায্য করে। এই রস খাওয়ার পর শরীরে ইউরিনের মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। কিডনিতে পাথর থাকলে নিয়মিত ও সীমিত পরিমাণে রস পান করলে তা ছোট হতে শুরু করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, পেটের হালকা ইনফেকশন, সর্দি-কাশি কিংবা শরীরে ভাইরাল সংক্রমণের সময় পাথরকুচি পাতার রস প্রতিরোধক ঢাল হিসেবে কাজ করে। এটি পান করলে কখনো কখনো প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়তে পারে, যা শরীরের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়ক। তবে এই রসের মাত্রা না মেনে খেলে হজমে সমস্যা, অম্বল, বা মাথা ঘোরা জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘরোয়া ওষুধ হলেও এটিকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।
বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url