গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা- এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন

                     

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়। এই সময়ে কিছু সাধারণ ভুল মায়ের ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানুন কী করবেন, কী করবেন না  এবং কীভাবে সুস্থ থাকবেন। 

গর্ভাবস্থায়-প্রথম-৩-মাসের-সতর্কতা

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও থাকছে বাস্তবিক টিপস ও সাবধানতা এবং গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত। এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং গর্ভকালীন সময়টিকে নিরাপদ ও শান্তিময় করতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না।। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস মা ও গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শরীরে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়, যা সঠিকভাবে যত্ন না নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। অনেকেই না জেনে এমন কিছু কাজ করেন, যা অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শুরু থেকেই কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। নিচে সহজ ভাষায় সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলো।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনঃ গর্ভাবস্থার শুরুতে অনেকেই মাথাব্যথা, জ্বর বা হালকা সমস্যা হলে নিজের মতো করে ওষুধ খেয়ে নেন। কিন্তু এই সময় শিশুর অঙ্গ গঠন শুরু হয়, তাই ভুল ওষুধ তার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি না খাওয়াঃ গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি। পানি কম খেলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণঃ চা, কফি বা সফট ড্রিঙ্কসের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে। দিনে ১ কাপের বেশি কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় না খাওয়াই ভালো।
  • ভারী কাজ বা অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটিঃ অনেক নারী প্রথম ৩ মাসে কাজের চাপে ভারী ব্যাগ তোলা, ঝুঁকে কাজ করা বা বেশি সময় হাঁটাহাঁটি করেন। এতে পেটের চাপ বাড়ে, এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই হালকা কাজ করুন ও বেশি বিশ্রাম নিন।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহলঃ ধূমপান ও অ্যালকোহল গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিকর অভ্যাস। এটি শিশুর ওজন কমে যাওয়া, জন্মগত সমস্যা এমনকি গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। তাই গর্ভধারণের শুরু থেকেই এগুলো পুরোপুরি পরিহার করা উচিত। 
  • কাঁচা বা অপরিষ্কার খাবার খাওয়াঃ ডিম, মাছ বা মাংস যদি পুরোপুরি রান্না না করা হয় তাহলে তা ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে যা গর্ভের শিশুর জন্য বিপজ্জনক। সবসময় ভালোভাবে রান্না করা এবং পরিষ্কার খাবার খেতে হবে।
  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ গর্ভাবস্থায় উদ্বিগ্নতা ও মানসিক চাপ অনেক নারীকে ঘিরে ধরে। এটা শিশুর মনোবিকাশেও প্রভাব ফেলতে পারে। পারিবারিক সাপোর্ট নিন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকুন এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করুন।
  •  ডাক্তারের নিয়মিত চেকআপ মিস করাঃ অনেকেই ভাবেন সমস্যা না থাকলে চেকআপের দরকার নেই। কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে নিয়মিত চেকআপ না করলে অনেক জটিলতা ধরা পড়ে না। তাই ডাক্তারের দেওয়া সময়মতো ফলোআপ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
  • প্রথম থেকেই প্রেগন্যান্সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ শুরু করুনঃ ডাক্তারের পরামর্শে ফলিক অ্যাসিড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট শুরু করুন। এটি শিশুর মস্তিষ্ক এবং নার্ভ গঠনে সাহায্য করে এবং নানা জন্মগত ঝুঁকি হ্রাস করে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ২ মাসের সর্তকতা

গর্ভাবস্থায় প্রথম ২ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। মায়ের জীবনে গর্ভাবস্থার শুরুটা যেমন আনন্দের, তেমনি থাকে কিছু অজানা ভয় আর দ্বিধা। প্রথম দুই মাসেই গর্ভস্থ শিশুর ভিত্তি তৈরি হয়। তাই এই সময়টাকে বলা হয় গোল্ডেন পিরিয়ড। কিন্তু ছোট ছোট ভুল অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ডেকে আনতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার শুরুর দিকেই জানতে হবে কোন অভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। সচেতনতা মানেই নিরাপদ মাতৃত্ব।
  • প্রথম ২ মাসে গর্ভে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই খুব সাধারণ অসুস্থতার সময়েও আপনি যা আগে খেতেন, সেটা এখন আর নিরাপদ নয়। গর্ভাবস্থায় নিজে থেকে ওষুধ খেলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি পর্যন্ত হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একটাও ট্যাবলেট নয়। মনে রাখবেন এখন আপনি একা নন।
  • ভারী জিনিস তোলা, বারবার নিচু হওয়া কিংবা বেশি হাঁটাহাঁটি, এগুলো প্রথম দিকে বিপজ্জনক হতে পারে। এমনও দেখা গেছে, রান্নাঘরে অসাবধানতায় পড়ে গিয়ে অনেক মায়ের গর্ভপাত হয়েছে। তাই এই সময় নিজেকে একটু রানীর মতো ট্রিট করুন। বিশ্রামই শ্রেষ্ঠ কাজ।
  • কাঁচা দুধ, কাঁচা মাছ বা অর্ধসিদ্ধ ডিম খেলে লিস্টেরিয়া বা সালমোনেলা নামের জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। এগুলো গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই রান্না ভালোভাবে হয়েছে কি না সেটা ভালোভাবে যাচাই করে তবেই খাবার গ্রহণ করুন।
  • একটা গোপন কথা বলি- শিশুর মানসিক গঠন শুরু হয় গর্ভেই। তাই মায়ের মন খারাপ থাকলে তার প্রভাব শিশুর উপরও পড়ে। পারিবারিক ভালোবাসা, সঙ্গীর সহযোগিতা ও ইতিবাচক চিন্তা এই সময় খুব দরকার। গান শুনুন, বই পড়ুন, বা প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটুন যা আপনাকে শান্ত করে।
  • ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি শরীরে পর্যাপ্ত না থাকলে শিশুর স্নায়বিক গঠন ঠিকমতো হয় না। তাই ডাক্তারের দেওয়া সাপ্লিমেন্টগুলো নিয়মিত গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এগুলোকে ছোট মনে করবেন না, এটাই ভবিষ্যতের বড় সুরক্ষা।
  • অনেকেই মনে করেন প্রথম দিকে কিছু হয়নি মানেই সব ঠিক আছে। কিন্তু অনেক সমস্যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। একটি আল্ট্রাসাউন্ড বা রুটিন চেকআপই অনেক বড় বিপদ আগে থেকে ঠেকাতে পারে। তাই প্রেগন্যান্সি মানেই নিয়মিত ডাক্তারের সাথেই পথ চলা।
প্রথম ২ মাস মানেই শুধু অপেক্ষা নয়। এটা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির সময়। আপনি যে সতর্কতা এখন মেনে চলবেন সেটাই গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা, সুরক্ষা এবং বিকাশে ভূমিকা রাখবে। নিজের শরীরকে গুরুত্ব দিন। কারণ এখন আপনার মধ্যে গড়ে উঠছে একটি নতুন জীবন। এই জীবন যেন সুন্দর হয় সেই দায়িত্ব আপনার সাথেই জড়িত।

গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের সর্তকতা

গর্ভাবস্থার প্রথম মাসেই শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। এই সময় অনেক নারী বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভবতী। ফলে কিছু সাধারণ ভুল গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথম মাসে শরীরের ভেতরে শুরু হয় গর্ভস্থ শিশুর প্রাথমিক গঠন। তাই গর্ভধারণের শুরুতেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা জানা ও মানা খুব জরুরি। এই লেখায় আপনি জানতে পারবেন কী কী করলে মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

  • প্রথম মাসে অনেক নারী বুঝতেই পারেন না তারা গর্ভবতী। ক্লান্তি, হালকা ব্যথা, মুড পরিবর্তন, কিংবা মাসিক না হওয়া এগুলো শরীরের সিগন্যাল। এসবকে হালকা ভাবে না নিয়ে, সময়মতো প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হোন।
  • গর্ভধারণের খবর শুনেই ডাক্তারের কাছে না দৌড়ে প্রথমে পরিবারকে জানান। সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হলে মানসিকভাবে শান্ত থাকবেন। এরপর একজন ভালো গাইনোকলজিস্টের সঙ্গে দেখা করুন। যিনি এই যাত্রায় আপনার পথপ্রদর্শক হবেন।
  • এই সময়ে ফলিক অ্যাসিড হলো শিশুর সুরক্ষা তৈরি করে। এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের গঠনে সাহায্য করে। ভুলে গেলেও ক্ষতি, তাই একটিও দিন বাদ দেবেন না। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ভিটামিন নেওয়ার সময়সূচি তৈরি করুন।
  • ক্যাফেইন, কাঁচা খাবার, প্যাকেটজাত ফাস্ট ফুড ইত্যাদি এই সময় এগুলো শরীরে বিষের মতো কাজ করতে পারে। গর্ভপাত, সংক্রমণ বা শিশুর বিকাশে সমস্যা হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব ঘরোয়া খাবার খান এবং পরিষ্কার পানি পান করুন।
  • এই সময় শরীর পরিবর্তন করছে নিজেকে। ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব, বমি সবই স্বাভাবিক। তাই একটানা কাজ না করে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন। একটা নরম বালিশে একটু হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলেই অনেকটা ভালো লাগবে।
  • এই সময় অনেক মা-ই ভয়, দুশ্চিন্তা বা হরমোনজনিত মুড সুইংয়ের শিকার হন। আপনি একা নন। নিজের কথা কাছের কাউকে খুলে বলুন। প্রয়োজনে হালকা মিউজিক শুনুন বা বই পড়ুন। আপনি শান্ত থাকলে শিশুও থাকবে নিরাপদ।
  • অনেকেই বলেন- আরে এখন তো কিছু হয়নি, পরে যাব ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু প্রথম মাসেই কিছু মৌলিক পরীক্ষা জরুরি। যেমনঃ রক্তের গ্রুপ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। এইগুলো আগে থেকেই জানা থাকলে ঝুঁকি কমবে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পেটব্যথা

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে পেটব্যথা একটি সাধারণ এবং অনেক সময় স্বাভাবিক উপসর্গ হতে পারে।তাই আপনাকে  গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে জানতে হবে। জরায়ুর ভেতরে শিশুর বৃদ্ধির জন্য শরীরের ভিতরে নানা পরিবর্তন হয়। যেগুলোর ফলে হালকা টান বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে তলপেট বা কোমরের আশপাশে অল্প টান ধরার মতো ব্যথা অনেক হবু মা অনুভব করেন। 


তবে ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়, রক্তপাত হয় বা বমি সঙ্গে থাকে, তবে এটি গর্ভপাত বা একটোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হতে পারে। তাই পেটব্যথা একবার হলেও অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজের এবং গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সচেতনতা আর দ্রুত পদক্ষেপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে খাবারের প্রতি সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়েই গর্ভের শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন শুরু হয়। প্রতিদিনের খাবারে সুষম পুষ্টি থাকা জরুরি। যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, প্রোটিন ও ফাইবার। সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি ও কয়েকটি বাদাম খাওয়া ভালো, এরপর নাশতায় ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, ওটস, দুধ বা সেদ্ধ ডাল খেতে পারেন। দুপুরে ভাতের সঙ্গে ডিম, মাছ, সবজি ও ডাল রাখা ভালো। 

আর রাতে হালকা খাবার যেমন- রুটি, সেদ্ধ সবজি ও দুধ গ্রহণ করতে পারেন। এ সময় কাঁচা বা অর্ধসেদ্ধ খাবার, যেমন- কাঁচা ডিম, কাঁচা মাছ, প্যাকেটজাত প্রসেসড ফুড, সফট চিজ বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে ইনফেকশন বা শিশুর গঠনে সমস্যা হতে পারে। প্রচুর পানি পান করুন। কিন্তু একসাথে অনেকটা না খেয়ে সারা দিনে ভাগ করে খান। মনে রাখবেন এই সময় আপনার পেট শুধু আপনার জন্য নয়, আরেকটি নতুন প্রাণের ভবিষ্যতের জন্যও।

৩ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

গর্ভাবস্থার তিন মাস মানে প্রায় ১২ সপ্তাহের সময়কাল। যেখানে শিশুর শরীরের মৌলিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে সে নড়াচড়া করতে শুরু করে। তবে এই সময় অনেক মা শিশুর নড়াচড়া টের পান না। কারণ বাচ্চা তখনও খুব ছোট এবং জরায়ুর গভীরে অবস্থান করে। আল্ট্রাসাউন্ডে এই সময় শিশুর হাত-পা নাড়ানো, ঘুরে বেড়ানো বা হালকা জাম্প করার দৃশ্য দেখা যায়, যা অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত। 

অনেক মা ভাবেন ৩ মাসেই পেটে নড়াচড়া অনুভব করা উচিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাধারণত গর্ভাবস্থার ১৬-২০ সপ্তাহ থেকে মা প্রথমবার বাচ্চার নড়াচড়া স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন। তাই তিন মাসে কোনো নাড়াচাড়া না অনুভব করলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। নিয়মিত চেকআপ ও আল্ট্রাসাউন্ডই এই সময় শিশুর সুস্থতার সবচেয়ে বড় আশ্বাস।

গর্ভাবস্থার শুরুতে যে ভুলগুলো অনেকেই করেন

গর্ভাবস্থার শুরু মানেই এক নতুন যাত্রা। কিন্তু এই সময় অনেক নারী কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলেন যা ভবিষ্যতে মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেকেই গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পরও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। আবার কেউ কেউ আগের মতোই যেকোনো ওষুধ খেতে থাকেন যা গর্ভের শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কিছু নারী মনে করেন পেটে বাচ্চা মানেই  দুগুণ খেতে হবে।

ফলে তারা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন। যা ওজন বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা তৈরি করে। এছাড়াও ধূমপান, ক্যাফেইন বা প্রসেসড ফুড খাওয়া অব্যাহত রাখা, মানসিক চাপ নেওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়াও বড় ভুলের মধ্যে পড়ে। গর্ভাবস্থার শুরুতেই যদি সচেতন হওয়া যায় এবং এসব ভুল এড়িয়ে চলা যায় তবে মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই এটি নিরাপদ ও সুন্দর এক যাত্রা হয়ে ওঠে।

কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এই সময়ে

"আমি জানতাম না পেঁপে খাওয়াও ক্ষতিকর হতে পারে" অনেক মায়ের মুখে এই কথা শোনা যায়। গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরের ভেতর ঘটে যাচ্ছে বিশাল পরিবর্তন, কিন্তু অনেকেই সেই গুরুত্বটা বুঝে ওঠেন না। তাই খাবারের ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত শিশুর জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, পাকা বা কাঁচা পেঁপেতে থাকে এক ধরনের এনজাইম যা জরায়ুকে উত্তেজিত করতে পারে। আবার কাঁচা মাছ বা মাংসে থাকা জীবাণু শিশুর বিকাশে বাঁধা দেয়। আপনি হয়তো ভাবছেন এক কাপ কফি কি এতটা ক্ষতিকর।

তবে হ্যাঁ দিনে একাধিক কফি হলে সেটা রক্তচাপে প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকিও বাড়ায়। রাস্তার ফুচকা, ঝাল ঝাল চিপস, বা প্রসেসড প্যাকেটজাত খাবার। এসব আপনি যতোই ভালোবাসুন, গর্ভাবস্থায় এগুলো শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। বরং ঘরে তৈরি হালকা খাবার, পর্যাপ্ত পানি, ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে ও আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবে। এই সময় একটাই নিয়ম- আপনি এখন খাচ্ছেন দুইজনের জন্য, কিন্তু দ্বিগুণ পরিমাণ নয়, দ্বিগুণ যত্ন নিয়ে।

গর্ভাবস্থায় কোন ওষুধ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে

গর্ভাবস্থার সময় ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু অসতর্কতা শিশুর জীবনের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় মাথাব্যথা বা সর্দি-কাশির মতো সাধারণ সমস্যায় আমরা যা খুশি তাই খেয়ে নিই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই অভ্যাস মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমনঃ আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), অ্যাসপিরিন (Aspirin) বা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যেগুলো গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বা এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। 

বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা দরকার। কারণ এই সময় শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। এমনকি যেসব ওষুধ আগে নিরাপদ ছিল, সেগুলোও গর্ভকালীন সময়ে বিপজ্জনক হতে পারে। তাই কোনো অসুস্থতায় নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একটিও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। মনে রাখবেন, আপনার একটি ছোট ভুল ভবিষ্যতের জন্য বড় অনুশোচনার কারণ হতে পারে।

সম-সাময়িক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ গর্ভবতী হওয়ার ৩ মাসের লক্ষণ কী কী?

উত্তরঃ মিসড পিরিয়ড, বমি বমি ভাব, স্তনের সংবেদনশীলতা বা ব্যথা অনুভব, ক্লান্তি এবং ঘুমের পরিবর্তন বা ইত্যাদি প্রথম তিন মাসের লক্ষণ।

প্রশ্নঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে কী কী লক্ষণ দেখা যায়?

উত্তরঃ প্রথম তিন মাসে মাসিক বন্ধ থাকা, বমি বমি ভাব, শারীরিক দুর্বলতা, স্তনের নরম উত্তেজনা, ও মনোভাবের ওঠানামা হয় অথবা মুড সুইং হতে পারে।

প্রশ্নঃ মেয়ে সন্তান সাধারণত কত মাসে হয়?

উত্তরঃ মেয়ে সন্তান গর্ভাবস্থার সময় সাধারণত প্রায় ৯ মাস বা ৩৪-৩৮ সপ্তাহের মধ্যে হয়।

প্রশ্নঃ গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার উপায় কী কী?

উত্তরঃ সুষম বা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ, মানসিক চাপ কমানো এবং ধূমপান-অ্যালকোহল এড়ানো।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি খেতে হবে?

উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় দিনে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। একবারে বেশি করে পানি না খেয়ে একটু পর পর বারে বারে খেতে হবে।

প্রশ্নঃ দুই মাসের বাচ্চা পেটে কেমন হয়?

উত্তরঃ দুই মাসের গর্ভের শিশুর আকার সাধারণত সাইজে ছোট আলুর মতো হয় ও ধীরে ধীরে নড়াচড়া শুরু করে।

প্রশ্নঃ ছেলে হবে না মেয়ে হবে কি করে বুঝবো?

উত্তরঃ এটা সঠিকভাবে বোঝার জন্য আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করানোই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় মাসের তলপেটে ব্যথা কেন হয়?

উত্তরঃ দ্বিতীয় মাসে তলপেটে ব্যথা হবার কারণ হতে পারে গর্ভাশয়ের বৃদ্ধি, হরমোনের পরিবর্তন বা প্রস্রাবনালীর সংক্রমণ। তবে ব্যথার পরিমাণ বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সর্তকতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস মা ও সন্তানের সুস্থতার ভিত্তি গড়ে তোলে। এ সময়ের ছোট ভুল বড় বিপদের কারণ হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি। নিজেকে আরাম দেওয়া আর শিশুর যত্ন নেওয়াই এই সময়ের প্রধান কাজ। 

ছোট ভুল ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই মায়ের ভালো থাকা মানেই শিশুর নিরাপদ ভবিষ্যৎ। মনে রাখবেন, আপনার এই যত্নই আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রথম ধাপ। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url