সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ফ্রি ও প্রো ভার্সন- নতুন আপডেট

                   

সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে আপনি চাইলেই আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়েই চমৎকার ভিডিও এডিটিং করতে পারেন। বর্তমানে মোবাইল বা কম্পিউটারে ভিডিও এডিটিং করার জন্য অনেক ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে। তবে আজকে আমরা আপনাকে জানাবো সেরা কিছু সফটওয়্যার সম্পর্কে।

সেরা-ভিডিও-এডিটিং-সফটওয়্যারযে সফটওয়্যার গুলো দিয়ে আপনি চাইলে খুব সহজেই ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন। এমনকি যারা একেবারে নতুন এবং ভিডিও এডিটিং এ দক্ষ নয় তারাও এ সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজেই ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্তমানে সকলেরই জানার আগ্রহ রয়েছে। আজকের ডিজিটাল যুগে ভিডিও তৈরি আর শুধুমাত্র প্রফেশনালদের কাজ নয়। ইউটিউবার, ফেসবুক কনটেন্ট ক্রিয়েটর, অনলাইন শিক্ষকদের জন্য ভালো একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার খুবই দরকার।

অনেকে মনে করেন ভালো সফটওয়্যার মানেই অনেক দাম, কিন্তু আসলে এমন অনেক ফ্রি সফটওয়্যারও আছে যা দিয়ে অসাধারণ মানের ভিডিও বানানো যায়। আবার যারা প্রফেশনাল মানের কাজ করতে চান, তাদের জন্য প্রো ভার্সন সফটওয়্যারও আছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় এবং কাজের সফটওয়্যার তুলে ধরা হলো-
  • CapCut: এ সফটওয়্যার এর ফ্রি ও প্রো দুটা ভার্সন রয়েছে। সহজ ইন্টারফেস, মোবাইল ও পিসি দুই ভার্সনেই ব্যবহার করা যায়, ইউটিউব শর্টস বানানোর জন্য অসাধারণ একটি সফটওয়্যার।
  • Camtasia: এই সফটওয়্যারটির ফ্রি এবং প্রো দুটো ভার্সন রয়েছে। আপনি আপনি চাইলে এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিটিং করতে পারেন। 
  • Adobe Premiere Pro: সিনেমা, ডকুমেন্টারি বা বড় ভিডিও প্রজেক্টে বানাতে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়। এই সফটওয়্যার এর মধ্যে সব ধরনের এডিটিং ফিচার যুক্ত রয়েছে।
  • Filmora: এই সফটওয়্যারটি আপনি খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। যারা ভিডিও এডিটিং শুরু করতে চাচ্ছেন বা যারা প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর তারা উভয়ই এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন।
  •  Kine Master: বর্তমানে এই সফটওয়্যারটি প্রফেশনাল ভিডিও এডিট করার জন্য খুবই জনপ্রিয়। এই সফটওয়্যারটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফিচার যা আপনার ভিডিওকে আরো সুন্দর করে তোলে।
  • Movavi Video Editor Plus: যারা শখ করে ভিডিও এডিটিং করেন বা ইউটিউবার রয়েছেন তাদের জন্য এই সফটওয়্যারটি খুবই ভালো। এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ভিডিও এডিটিং করে সেখান থেকে বিভিন্ন সাইটে আপলোড করতে পারবেন।
  • VN Video Editor: এই সফটওয়্যারটি নতুনদের জন্য একেবারে পারফেক্ট। এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই টেক্সট, ট্রানজিশন ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদির যোগ করতে পারবেন।
  • Inshot: বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় ভিডিও এডিটিং অ্যাপস। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে থাকেন তাদের জন্য এই সফটওয়্যারটি বেশ কার্যকরী। এই সফটওয়্যার এর বেশিরভাগ ফিচার ফ্রি। এই সফটওয়্যার এর সবথেকে ভালো দিক হলো মোবাইলের মাধ্যমে এই সফটওয়্যার এর সাহায্যে আপনি খুব ভালো মানের ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন।
  • DaVinci Resolve (Free): এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনি প্রফেশনাল লুক, রঙ ঠিক করা ও অডিও মিক্সিং করতে পারবেন। এই সফটওয়্যারটি পিসির জন্য বেস্ট।
  • Shotcut: ভিডিও এডিটিং এর জন্য এই সফটওয়্যারটি খুবই চমৎকার। এই সফটওয়্যারটি হলো ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, এটার কোনো ওয়াটারমার্ক নেই। তাই আপনি নির্দ্বিধায় এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • Final Cut Pro (Mac): এই সফটওয়্যারটি হল ম্যাক ব্যবহারকারীদের জন্য ফাস্ট ও স্মার্ট ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার।
  • Wondershare Filmora Pro: এই সফটওয়্যারটিতে ইউজার-ফ্রেন্ডলি, প্রো লেভেলের ইফেক্ট ও ট্রানজিশন রয়েছে। যারা নতুন ভিডিও এডিটিং শিখতে চাচ্ছেন তাদের শুরু করার জন্য এই সফটওয়্যারটি অনেক ভালো।

ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

আপনি যদি ভিডিও এডিটিং শিখতে চান বা নিজের ইউটিউব, ফেসবুক, বা অনলাইন ক্লাসের জন্য ভিডিও তৈরি করতে চান, তাহলে ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার আপনার জন্য আদর্শ। ভালো মানের ভিডিও বানানোর জন্য সব সময় দামি সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয় না। এখন এমন অনেক ফ্রি টুল রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই প্রফেশনাল লুকের ভিডিও তৈরি করতে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকর ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হলো-

Capcut

CapCut হল এমন একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, যেটা এখন মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস বা টিকটকের জন্য ভিডিও বানান, তাদের জন্য এটা এক কথায় দারুণ একটি টুল। CapCut-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটা একদম ফ্রি এবং এর ইন্টারফেস এতটাই সহজ যে নতুনরাও খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। 

এতে আপনি ভিডিও কাটতে, ক্লিপ জোড়া দিতে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করতে, ট্রানজিশন দিতে এমনকি টেক্সট ও ইফেক্টও অ্যাড করতে পারেন একদম ঝামেলাহীনভাবে। এ ছাড়া CapCut-এ অনেক রেডি টেমপ্লেট থাকে, যা ব্যবহার করে আপনি মিনিটের মধ্যেই প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে পারেন। যারা ভিডিও এডিটিং নিয়ে একেবারে শুরু করছেন, তাদের জন্য CapCut নিঃসন্দেহে একটি পারফেক্ট চয়েস।

VN Video Editor

VN Video Editor হল একটি ফ্রি এবং ইউজার-ফ্রেন্ডলি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, যা বিশেষ করে নতুনদের জন্য আদর্শ। আপনি যদি ভিডিও এডিটিং শুরু করতে চান, তবে VN Video Editor আপনার জন্য দারুণ একটি সফটওয়্যার। এতে আপনি খুব সহজে ভিডিও কাটা, ট্রিম করা, টেক্সট ও ইফেক্ট অ্যাড করা, এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করা সহ অনেক কিছু করতে পারবেন।

সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, এটি একদম ফ্রি এবং এর কোনো ওয়াটারমার্ক নেই, যা সাধারণত ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারে দেখা যায়। অ্যাপটির ইন্টারফেস এতটাই সোজা, যে একদম শুরুর দিকে থাকা সত্ত্বেও আপনি খুব দ্রুত কাজ করতে পারবেন। এছাড়া, VN Video Editor-এ আপনি একাধিক লেয়ার ব্যবহার করতে পারেন, যার ফলে আপনি জটিল ভিডিও প্রকল্পও সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন। এমনকি আপনি মোবাইল ফোনেই প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।

DaVinci Resolve (Free Version)

DaVinci Resolve হল এমন একটি প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যা ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করেও আপনি অসাধারণ মানের ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে কালার গ্রেডিং এবং অডিও মিক্সিং এর জন্য খুবই জনপ্রিয়। যদিও সফটওয়্যারটি প্রফেশনাল ইউজারদের জন্য তৈরি, তবে এর ফ্রি ভার্সনটি সহজেই নতুনদের জন্যও ব্যবহারযোগ্য। 

এর মাধ্যমে আপনি ৪কে ভিডিও, মাল্টি-ট্র্যাক এডিটিং, এবং কমপ্লেক্স ট্রানজিশন তৈরি করতে পারেন। যারা সিনেমাটিক ভিডিও বানাতে চান, তাদের জন্য DaVinci Resolve একটি পারফেক্ট টুল। যদিও সফটওয়্যারটি কিছুটা ভারী এবং পিসি অথবা ম্যাকের শক্তিশালী কনফিগারেশন প্রয়োজন, তবুও এর শক্তিশালী ফিচারগুলি এটি সেরা ভিডিও এডিটিং টুলগুলোর মধ্যে একটি করে তোলে।

OpenShot

OpenShot হলো একটি ফ্রি এবং ওপেন-সোর্স ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যা নতুনদের জন্য একেবারে পারফেক্ট। আপনি যদি একদম শুরু থেকে ভিডিও এডিটিং শিখতে চান, তাহলে OpenShot হতে পারে আপনার জন্য দারুণ একটি প্ল্যাটফর্ম। এর ইন্টারফেস খুবই সহজ, এবং ড্র্যাগ-অ্যান্ড-ড্রপ ফিচার থাকার কারণে আপনি কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভিডিও ক্লিপ কাটা, জোড়া দেওয়া, টাইটেল যোগ করা কিংবা ট্রানজিশন ব্যবহার করতে পারবেন। 

এটি Windows, macOS, এবং Linux সব ধরনের কম্পিউটারে চলে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এতে কোনো ওয়াটারমার্ক নেই এবং ভিডিও এক্সপোর্ট কোয়ালিটিও ভালো। হালকা কনফিগারেশনের কম্পিউটারেও ভালোভাবে চলে, তাই যারা ভারী সফটওয়্যার চালাতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সমাধান। মোট কথা, ভিডিও এডিটিংয়ে হাতেখড়ি নিতে চাইলে OpenShot আপনার জন্য নির্ভরযোগ্য এক সহযাত্রী হতে পারে।

Inshot

InShot হলো এমন একটি মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, যা নতুনদের থেকে শুরু করে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাঝেও খুবই জনপ্রিয়। আপনি যদি নিজের মোবাইল ফোনেই ভিডিও এডিট করতে চান, তাহলে InShot হতে পারে আপনার জন্য সেরা একটি অ্যাপ। এটি দিয়ে আপনি খুব সহজে ভিডিও কাটতে, একাধিক ক্লিপ জোড়া দিতে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করতে, সুন্দর ফন্টে টেক্সট লিখতে এবং ট্রানজিশন ও ফিল্টার ব্যবহার করে ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য যেমন ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস বা ইনস্টাগ্রাম ভিডিও বানানোর জন্য এটি দারুণ কার্যকর। InShot-এর ইন্টারফেস এতটাই সহজ যে কোনো ভিডিও এডিটিং অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি খুব দ্রুত এটি ব্যবহার করতে শিখে যাবেন। যদিও এর অধিকাংশ ফিচারই ফ্রি। তবে ফ্রি ভার্সনে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে (যেমন: ওয়াটারমার্ক থাকে), তবে চাইলে আপনি পেইড ভার্সন কিনে আরও উন্নত ফিচার আনলক করতে পারেন। এক কথায়, যারা ঝামেলাহীনভাবে মোবাইলেই ভিডিও এডিট করতে চান, তাদের জন্য InShot একটি চমৎকার সমাধান।

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

যারা ইউটিউব, শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি বা ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য দরকার হয় প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। এসব সফটওয়্যার সাধারণত বেশি ফিচারসমৃদ্ধ, শক্তিশালী, এবং জটিল ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য তৈরি। আপনি যদি ভিডিওর মধ্যে কালার কারেকশন, অডিও ব্যালেন্সিং, গ্রিন স্ক্রিন, স্পেশাল ইফেক্ট, বা মাল্টি-ক্যামেরা এডিট করতে চান, তাহলে প্রফেশনাল সফটওয়্যার ছাড়া তা সম্ভব নয়। 

আরো পড়ুনঃ পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে- জানুন ছোট ডিভাইসের বড় ম্যাজিক

যদিও এসব টুলের কিছুটা লার্নিং কার্ভ থাকে, কিন্তু একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে আপনি যে কোনো ধরনের ভিডিও প্রজেক্টে দুর্দান্ত কাজ করতে পারবেন। প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সাধারণত পেইড হলেও, এতে আপনি সর্বোচ্চ আউটপুট এবং নিয়ন্ত্রণ পাবেন। তাই যারা প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে চান সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করতে পারেন।

Adobe Premiere Pro 

Adobe Premiere Pro হল এমন একটি প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যেটা বিশ্বজুড়ে ভিডিও এডিটর, ইউটিউবার, ফিল্ম মেকার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। আপনি যদি ভিডিও এডিটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান বা ক্লায়েন্টের জন্য কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করতে চান, তাহলে Premiere Pro হতে পারে আপনার সবচেয়ে ভালো সঙ্গী। 

এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি খুব সহজে ভিডিও কাটতে, ট্রিম করতে, টেক্সট যোগ করতে, কালার ঠিক করতে, সাউন্ড ব্যালেন্স করতে এবং আরও নানা রকম স্পেশাল ইফেক্ট যুক্ত করতে পারবেন। এর একটি বড় সুবিধা হলো এটি Adobe After Effects, Photoshop, এবং অন্যান্য Adobe টুলের সঙ্গে একসাথে কাজ করতে পারে।

ফলে আপনি চাইলে প্রফেশনাল লেভেলের সিনেমাটিক ভিডিওও বানাতে পারেন। Premiere Pro একটু হেভি সফটওয়্যার এবং চালাতে ভালো কনফিগারেশনের পিসি বা ল্যাপটপ লাগবে, তবে একবার আপনি এটি শিখে ফেললে, যে কোনো ধরনের ভিডিও প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন খুব সহজে। এটি পেইড সফটওয়্যার হলেও যারা সিরিয়াসলি ভিডিও নিয়ে কাজ করতে চান, তাদের জন্য এটি এক কথায় সেরা।

Final Cut Pro (Mac Only)

Final Cut Pro হলো Apple এর তৈরি একটি শক্তিশালী ও প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যা শুধু Mac কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়। যারা ম্যাক ব্যবহার করেন এবং প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিট করতে চান, তাদের জন্য Final Cut Pro নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ টুল। এর ইন্টারফেস অনেক স্মার্ট এবং দ্রুত কাজ করার উপযোগী করে তৈরি, যাতে বড় ভিডিও প্রজেক্টেও সময় বাঁচে। 

এতে আপনি সহজেই ভিডিও ক্লিপ এডিট করতে, মিউজিক ও ভয়েস ওভার যোগ করতে, কালার গ্রেডিং করতে এবং বিভিন্ন ইফেক্ট ও ট্রানজিশন দিয়ে ভিডিওকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। এই সফটওয়্যারটি বিশেষভাবে ইউটিউবার, সিনেমা নির্মাতা, ও ম্যাক ব্যবহারকারী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের পছন্দের তালিকায় থাকে। কারণ এটি খুবই ফাস্ট, স্থিতিশীল এবং রেন্ডারিং টাইম অনেক কম। যদিও এটি একটি পেইড সফটওয়্যার, তবে একবার কিনলেই আপনি লাইফটাইম ব্যবহার করতে পারবেন যা অনেকের জন্য বড় সুবিধা।

DaVinci Resolve Studio (Paid Version)

DaVinci Resolve Studio হলো DaVinci Resolve এর পেইড বা প্রিমিয়াম ভার্সন, যা মূলত তাদের জন্য তৈরি, যারা সিরিয়াসলি ভিডিও এডিটিং করেন বা প্রফেশনাল কাজের জন্য একটি শক্তিশালী সফটওয়্যার খুঁজছেন। ফ্রি ভার্সনের তুলনায় Studio ভার্সনে আপনি পাবেন আরও অ্যাডভান্সড ফিচার, যেমন- সিনেমাটিক কালার গ্রেডিং, অ্যাডভান্সড ভিডিও ইফেক্টস, 3D ভিডিও এডিটিং, নয়েজ রিডাকশন, এবং মাল্টি-ইউজার প্রজেক্ট ফিচার।

এই সফটওয়্যারটি এতটাই শক্তিশালী যে, অনেক হলিউড মুভি এবং টিভি শো-ও এর মাধ্যমে এডিট করা হয়। যদিও এটি চালাতে ভালো কনফিগারেশনের পিসি বা ম্যাক দরকার হয়, কিন্তু একবার আপনি অভ্যস্ত হয়ে গেলে এর পারফরম্যান্স ও কোয়ালিটি দেখে মুগ্ধ হবেন। যারা ভিডিও প্রোডাকশন, সিনেমা এডিটিং বা ক্লায়েন্ট ভিত্তিক প্রজেক্টে কাজ করেন, তাদের জন্য DaVinci Resolve Studio একটি এক্সপার্ট-লেভেলের সমাধান। এটি একবার কিনে লাইফটাইম ব্যবহার করা যায়, তাই বারবার সাবস্ক্রিপশনের ঝামেলাও নেই।

Wondershare Filmora Pro

Wondershare Filmora Pro হলো এমন একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার যা প্রফেশনাল মানের ফিচার অফার করলেও ব্যবহার করা তুলনামূলকভাবে সহজ। যারা ভিডিও এডিটিংয়ে একটু সিরিয়াস, কিন্তু জটিল সফটওয়্যারে হাত দিতে ভয় পান, তাদের জন্য Filmora Pro একদম পারফেক্ট চয়েস। এতে আপনি পাবেন মাল্টি-লেয়ার টাইমলাইন, কালার গ্রেডিং, অডিও এনহান্সমেন্ট, ভিডিও ট্রানজিশন, স্পেশাল ইফেক্টস সহ আরও অনেক ফিচার যা সাধারণত প্রো সফটওয়্যারেই থাকে।

Filmora Pro এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর ইউজার ইন্টারফেস খুবই পরিষ্কার ও গুছানো, তাই নতুনরাও সহজে বুঝতে পারেন। প্রফেশনাল মানের ভিডিও বানাতে চাইলে এবং Adobe Premiere বা DaVinci Resolve আপনার কাছে কিছুটা কঠিন মনে হয়, তবে Filmora Pro হতে পারে আপনার জন্য সেরা বিকল্প। এটি পেইড সফটওয়্যার, তবে দামে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং যারা ইউটিউব ভিডিও, শর্ট ফিল্ম বা মার্কেটিং ভিডিও বানান, তাদের জন্য একেবারে উপযোগী।

মোবাইলে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

আজকাল মোবাইল ফোনেই ভিডিও রেকর্ড করা, এডিট করা এবং শেয়ার করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি যদি ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের জন্য ভিডিও তৈরি করেন, তাহলে মোবাইলেই ভিডিও এডিট করার জন্য অনেক ভালো মানের অ্যাপ পাওয়া যায়। যেমনঃ CapCut, InShot, KineMaster, VN Video Editor, এবং PowerDirector ইত্যাদি। এই সব অ্যাপগুলো দিয়ে আপনি ভিডিও কাটতে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করতে, টেক্সট বা সাবটাইটেল বসাতে, সুন্দর ইফেক্ট ও ট্রানজিশন যুক্ত করতে পারবেন একদম সহজভাবে।

সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এসব অ্যাপের ইন্টারফেস খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি, তাই যারা একদম নতুন, তারাও সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। অনেক অ্যাপের ফ্রি ভার্সনেই প্রায় সব দরকারি ফিচার থাকে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ওয়াটারমার্ক বা অ্যাড দেখা যায়। তবে পেইড ভার্সন নিলে আপনি আরও বেশি সুবিধা পাবেন। মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপগুলো তাদের জন্য দারুণ, যারা সব সময় ল্যাপটপ বা পিসি নিয়ে বসে এডিট করতে পারেন না, কিন্তু দ্রুত আর সহজে কাজ শেষ করতে চান।

ল্যাপটপে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

যদি আপনি ভিডিও এডিটিং সিরিয়াসলি করতে চান বা প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে চান, তাহলে ল্যাপটপে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ল্যাপটপে চলা ভিডিও এডিটরগুলো সাধারণত বেশি ফিচার-সমৃদ্ধ, বড় স্ক্রিনে কাজ করাও সহজ হয়, এবং ভিডিওর মান ও গতি দুটোই ভালো পাওয়া যায়। যেমন Adobe Premiere Pro, DaVinci Resolve, Final Cut Pro (Mac-এর জন্য), Filmora, এবং OpenShot ইত্যাদি।

এসব সফটওয়্যার দিয়ে আপনি সহজে ভিডিও কাটাছেঁড়া করতে পারেন, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করতে পারেন, কালার ঠিক করতে পারেন, ট্রানজিশন, ইফেক্টস, গ্রিন স্ক্রিন সব কিছুই এক ক্লিকে করতে পারবেন। শুধু ভিডিও বানানো না, আপনি চাইলে এসব সফটওয়্যার দিয়ে ইউটিউব ভিডিও, শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও, প্রেজেন্টেশন ভিডিও বা ব্র্যান্ড প্রমোশনাল ভিডিও ইত্যাদি তৈরি করতে পারবেন খুব সহজে। হ্যাঁ, ভালো পারফরম্যান্স পেতে আপনার ল্যাপটপে কিছুটা শক্তিশালী প্রসেসর ও র‍্যাম থাকা ভালো, তবে একবার শিখে গেলে আপনি নিজের সৃজনশীলতাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে পারবেন অনায়াসেই।

পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

যদি আপনি ভিডিও এডিটিংকে শুধু শখ নয়, বরং পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ এসব সফটওয়্যার সাধারণত প্রফেশনাল মানের ফিচারে ভরপুর থাকে, যেমনঃ উন্নত কালার গ্রেডিং, স্পেশাল ইফেক্ট, মাল্টি-ট্র্যাক এডিটিং, গ্রীন স্ক্রিন, অডিও সিনক্রোনাইজেশন এবং আরও অনেক কিছু। 

পেইড সফটওয়্যার যেমনঃ Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro (Mac-এর জন্য), DaVinci Resolve Studio, Wondershare Filmora Pro ইত্যাদি আপনাকে ভিডিওর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় এবং প্রজেক্টের গুণমান অনেক উন্নত করে। এই ধরনের সফটওয়্যারগুলোতে সাধারণত টেকনিক্যাল সাপোর্ট, নিয়মিত আপডেট এবং ব্যবহারকারী গাইডও দেওয়া থাকে। 

যা একজন ভিডিও এডিটরের কাজকে সহজ করে তোলে। যদিও এগুলোর জন্য খরচ একটু বেশি হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো আপনার দক্ষতা ও আয়—দুটোই বাড়াতে সাহায্য করবে। যারা ক্লায়েন্টের প্রজেক্টে কাজ করেন, ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানান, বা নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রমোশন করেন তাদের জন্য পেইড সফটওয়্যার একদমই উপযুক্ত।

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার free download

আপনি যদি নতুন ভিডিও এডিটিং শুরু করতে চান এবং এখনই পেইড সফটওয়্যারে বিনিয়োগ করতে না চান, তাহলে অনেক ভালো মানের ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ DaVinci Resolve (Free Version), OpenShot, Shotcut, HitFilm Express, বা মোবাইলের জন্য CapCut, InShot, VN Video Editor ইত্যাদি।

এই সফটওয়্যারগুলো একদম ফ্রিতে ডাউনলোড করা যায় এবং এগুলো দিয়ে একেবারে প্রফেশনাল লুকের ভিডিও বানানো সম্ভব। অনেকেই ভাবেন ফ্রি মানেই কম মানের, কিন্তু আসলে এই সফটওয়্যারগুলোর বেশিরভাগেই থাকে প্রয়োজনীয় সব ফিচার। ভিডিও কাটাছেড়া, ট্রানজিশন, ফিল্টার, টেক্সট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, এমনকি কালার কারেকশন পর্যন্ত।

শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেইড ভার্সনে আরও অ্যাডভান্সড ফিচার থাকে। আপনি চাইলে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এসব সফটওয়্যার নিরাপদে ডাউনলোড করতে পারেন, এবং কোনো ক্র্যাক বা অবৈধ ফাইল ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এক কথায়, শেখার শুরুতে ফ্রি সফটওয়্যারই যথেষ্ট, এতে খরচ ছাড়াই দক্ষতা তৈরি করা যায়।

মোবাইল বনাম পিসি কোন সফটওয়্যারটি বেছে নেবেন

ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য আপনি মোবাইল বা পিসি দুটোরই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন, তবে কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে তা নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন ও প্রয়োজনের উপর। যদি আপনি শুধু সহজ ভিডিও তৈরি করেন, যেমনঃ সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য শর্ট ভিডিও, রিলস, টিকটক বা ভ্লগ, তাহলে মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ যেমন CapCut, InShot, VN Video Editor ইত্যাদি আপনার জন্য যথেষ্ট। 

এগুলো ব্যবহার করা সহজ, দ্রুত এডিট করা যায় এবং মোবাইল থেকেই আপলোডও করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি পেশাদার মানের ভিডিও তৈরি করতে চান। যেমনঃ ইউটিউব প্রজেক্ট, ক্লায়েন্টের কাজ, সিনেমাটিক ভিডিও, বা কালার গ্রেডিংসহ ভারী এডিটিং ইত্যাদি। তাহলে পিসির সফটওয়্যার যেমনঃ Adobe Premiere Pro, DaVinci Resolve, বা Final Cut Pro ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

পিসি সফটওয়্যারগুলোতে থাকে আরও বেশি ফিচার, বড় স্ক্রিনে কাজ করার সুবিধা এবং উন্নত রেন্ডারিং স্পিড। তাই আপনি যদি নতুন হন বা হালকা কাজ করেন, তাহলে মোবাইল অ্যাপই যথেষ্ট। আর যদি ভিডিও এডিটিং নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান বা প্রফেশনাল কাজ করতে চান, তবে পিসির সফটওয়্যারই আপনার সঠিক পথ।

ফ্রি বনাম প্রো ভার্সন পার্থক্য ও সুবিধা

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের ফ্রি ভার্সনপ্রো ভার্সনের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো ফিচার ও নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ।  ফ্রি ভার্সন সাধারণত নতুনদের জন্য তৈরি, যেখানে আপনি বেসিক এডিটিং যেমন- ভিডিও কাটা, মিউজিক যোগ করা, টেক্সট বসানো ইত্যাদি করতে পারেন। তবে এতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে যেমন- ভিডিওতে ওয়াটারমার্ক, সীমিত ট্রানজিশন বা ইফেক্টস, এবং কিছু অ্যাডভান্সড ফিচার লক করে রাখা হয়। 

অন্যদিকে প্রো ভার্সন অর্থাৎ পেইড ভার্সনে আপনি পাবেন ফুল ফিচার আনলকড, কোনো ওয়াটারমার্ক থাকবে না, উন্নত কালার গ্রেডিং, হাই রেজুলিউশনে এক্সপোর্ট, প্রফেশনাল ইফেক্টস এবং টেকনিক্যাল সাপোর্টও পাওয়া যায়। যদি আপনি শেখার পর্যায়ে থাকেন বা হালকা কাজ করেন, তাহলে ফ্রি ভার্সনই যথেষ্ট। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ভিডিও তৈরি করেন, প্রজেক্টে কাজ করেন বা ইউটিউব বা ক্লায়েন্টর জন্য প্রফেশনাল মানের ভিডিও বানাতে চান, তাহলে প্রো ভার্সন ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

লেখকের মন্তব্যঃ সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়েছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। ভিডিও এডিটিং এখন শুধু প্রফেশনালদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা। আপনি চাইলে ফ্রি সফটওয়্যার দিয়েই শুরু করতে পারেন। তারপর অভিজ্ঞতা বাড়লে প্রো ভার্সন ব্যবহার করে আরও উন্নত মানের কাজ করতে পারবেন।

মোবাইল অ্যাপ সহজ ও দ্রুত হলেও, পিসি সফটওয়্যার বেশি ফিচার এবং নিয়ন্ত্রণ দেয়। নিজের কাজের ধরন ও লক্ষ্য অনুযায়ী সফটওয়্যার বেছে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। সঠিক ব্যবহার জানলে  যেকোনো সফটওয়্যার দিয়েই আপনি অসাধারণ ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url