রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয় | সময়মতো না জানলে হতে পারে বিপদ

                              

রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয় তা নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত থাকি। রক্তে ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি। কারণ এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সাধারণত হঠাৎ জ্বর, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি বা বমি ভাব দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

রক্তে-ইনফেকশন-হলে-কি-করনীয়

শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাত যেমন ক্ষতস্থান, ফোড়া বা কোন কিছুর আঘাত থেকেও রক্তে ইনফেকশন হতে পারে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো কিভাবে রক্তে ইনফেকশন রোধ করা যায় এবং রক্তে ইনফেকশন হলে আপনার করণীয় কি। আশা করি পুরো আর্টিকেল জুড়ে সঙ্গে থাকবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয় 

রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয় 

রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয় তা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। রক্তে ইনফেকশন মানে হচ্ছে শরীরের কোথাও কোনো ইনফেকশন হলে সেখানকার জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থাকে মেডিকেলের ভাষায় সেপসিস বলা হয়। এটি খুবই বিপজ্জনক একটি সমস্যা। কারণ জীবাণু যখন রক্তে মিশে যায় তখন তা পুরো শরীরকে অসুস্থ করে দিতে পারে। সাধারণত মূত্রনালীতে ইনফেকশন, কাটা-ছেঁড়া জায়গায় পুঁজ হওয়া, অপচিকিৎসা, ফুসফুসের ইনফেকশন বা অপারেশনের পর সংক্রমণ থেকে এটি হতে পারে। 

লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে জ্বর, দুর্বলতা, শরীর কাঁপা, ঘাম, মাথা ঘোরা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা মনোযোগে সমস্যা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রোগীকে বেশি করে পানি পান করাতে হবে, যেন শরীর ডিহাইড্রেট না হয়। পাশাপাশি পরিষ্কার বিছানায় শোয়াতে হবে এবং শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে যাতে ঠান্ডা না লাগে। রোগী খুব দুর্বল হলে একদম বিশ্রামে রাখতে হবে। অনেকেই নিজের ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে, যা একেবারেই উচিত নয়। 

কারণ ভুল ওষুধ রোগের অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। এই ধরনের সমস্যা যেন না হয় সেজন্য শরীরের যেকোনো ছোটখাটো ইনজুরি বা অসুখের চিকিৎসা ঠিকমতো করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখা জরুরি। এটি খুবই বিপজ্জনক একটি সমস্যা কারণ জীবাণু যখন রক্তে মিশে যায় তখন তা পুরো শরীরকে অসুস্থ করে দিতে পারে। তাই সময় থাকতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয়

শিশুদের রক্তে ইনফেকশন হলে কি করণীয় তা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় দুর্বল হওয়ায় রক্তে ইনফেকশন হলে ঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণত জন্মের পরপরই অথবা ছোট কোনো ইনফেকশন থেকে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হতে শুরু করে। লক্ষণ হিসেবে শিশুর জ্বর, নিস্তেজ ভাব, খাওয়ায় অনীহা, শ্বাস নিতে কষ্ট, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা কান্না কমে যাওয়ার মতো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। 


এমন পরিস্থিতিতে দেরি না করে দ্রুত শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ডাক্তার দেখানোর আগে শিশুকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা, দুধ বা তরল খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা এবং একেবারে বিশ্রামে রাখা জরুরি। কোনোভাবেই নিজের মতো করে ওষুধ দেওয়া ঠিক নয়। সময়মতো চিকিৎসা নিলে শিশু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তাই সচেতনতা আর দ্রুত সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় করণীয়।

রক্তে ইনফেকশন এর লক্ষণ

রক্তে ইনফেকশন হলে শরীরের মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেগুলো শুরুতে সাধারণ মনে হলেও ধীরে ধীরে গুরুতর হতে পারে। হঠাৎ করে জ্বর ওঠা, শরীর কাপা, অতিরিক্ত দুর্বল লাগা এবং ঘাম হওয়া এই রোগের শুরুতে দেখা যায়। অনেক সময় রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে এবং মাথা ঝিমঝিম করে। কেউ কেউ খাবার খেতে চায় না, চোখে ঘোর লেগে থাকে, এমনকি অনেক সময় মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবে। 

কারো যদি আগে থেকে কাটা-ছেঁড়া জায়গায় পুঁজ হয়, প্রস্রাবের ইনফেকশন বা অন্য কোনো জায়গায় সংক্রমণ থাকে তাহলে এসব লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে। কারণ রক্তে ইনফেকশন হলে শরীর খুব দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই এমন লক্ষণ দেখলেই দেরি না করে একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে জরুরি। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এই রোগ আরো অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে।

রক্তে ইনফেকশন কি কারনে হয়

রক্তে ইনফেকশন সাধারণত তখনই হয় যখন শরীরের কোনো অংশে জীবাণু ঢুকে রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি অনেক সময় ছোট কোনো কাটা-ছেঁড়া বা পুঁজ হওয়া ঘা থেকে শুরু হয়, যা ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ইনফেকশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া মূত্রনালীর ইনফেকশন, ফুসফুসে সংক্রমণ, পেটের ইনফেকশন, ডেলিভারির পর জীবাণু প্রবেশ, এমনকি অপারেশনের পর সংক্রমণ থেকেও রক্তে ইনফেকশন হতে পারে। 

নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে এটি জন্মের সময়ই হয়ে যেতে পারে যদি মায়ের শরীরে ইনফেকশন থাকে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, যেমন- ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই শরীরে যেকোনো ইনফেকশন হলে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করে রক্তে ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নবজাতকের ব্লাড ইনফেকশন কেন হয়

নবজাতক শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল। তাই জন্মের আগে বা পরে সহজেই রক্তে ইনফেকশন হতে পারে। অনেক সময় মায়ের শরীরে যদি প্রসবের সময় ইনফেকশন থাকে যেমন প্রস্রাবের ইনফেকশন বা জরায়ুর সংক্রমণ। তাহলে তা শিশুর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। আবার প্রসবের সময় যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকে বা শিশু জন্মের পর তার নাড়ি বা ত্বক ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত না রাখা হয়। 

তাহলে সেখান থেকেও জীবাণু রক্তে ঢুকে পড়তে পারে। অপরিচ্ছন্ন ডেলিভারি রুম, অপরিষ্কার হাত দিয়ে নবজাতককে ছোঁয়া, এমনকি অসুস্থ কারো সংস্পর্শেও শিশুর শরীরে জীবাণু চলে যেতে পারে। এসব কারণে নবজাতকের রক্তে ইনফেকশন হয়ে থাকে। যা দ্রুত শনাক্ত না করলে শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই মা ও শিশুর যত্নে সব সময় পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি।

রক্তে ইনফেকশন হলে কি ক্যান্সার হয়

অনেকে ভাবেন রক্তে ইনফেকশন হলে কি তা থেকে ক্যান্সার হতে পারে? বাস্তব কথা হলো রক্তে ইনফেকশন বা সেপসিস এবং ক্যান্সার এই দুইটি সম্পূর্ণ আলাদা রোগ। রক্তে ইনফেকশন সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর কারণে হয়। যা সময়মতো চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। আর ক্যান্সার হলো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। যা অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে শরীরে তৈরি হয়।

তবে দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন যদি শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘদিন থাকে এবং চিকিৎসা না করা হয় তখন তা কোনো জটিলতা তৈরি করতে পারে। কিন্তু সরাসরি রক্তে ইনফেকশন থেকে ক্যান্সার হয় না। তাই ভয় না পেয়ে রক্তে ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই হলো সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।

Blood infection hole ki hoy

আমাদের শরীরের ভেতরে একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে। যা আমাদের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু যখন কোনো ইনফেকশন শরীরের এক জায়গা থেকে ছড়িয়ে রক্তে ঢুকে পড়ে তখন সেই নিরাপত্তা ভেঙে যায়। রক্তে যখন জীবাণু মিশে যায় তখন তা শুধু এক জায়গায় থাকে না সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। তখনই শুরু হয় বড় বিপদ। জ্বর, কাঁপুনি, দ্রুত শ্বাস, দুর্বলতা এসব শরীরকে সিগন্যাল দেয় যে কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না। শরীর তখন ভেতর থেকে লড়াই করে। 

কিন্তু যদি সেই লড়াই খুব বেশি হয়ে যায় তাহলে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ঠিক তখনই দরকার হয় চিকিৎসকের পরামর্শ। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই রক্তে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে ইনফেকশন মানেই ভয় নয় বরং সচেতনতা আর দ্রুত চিকিৎসাই এখানে সবচেয়ে বড় শক্তি।

সচারাচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ রক্তে ইনফেকশন হলে কি মানুষ মারা যায়?

উত্তরঃ হ্যাঁ, রক্তে ইনফেকশন হলে যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে দ্রুত চিকিৎসা নিলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

প্রশ্নঃ ব্লাড এ ইনফেকশন কেন হয়?

উত্তরঃ শরীরের যেকোনো ইনফেকশন যেমন কাটা-ছেঁড়া, পুঁজ, প্রস্রাব বা ফুসফুসের ইনফেকশন থেকে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়লেই ব্লাড ইনফেকশন হয়।

প্রশ্নঃ রক্তের ইনফেকশন দূর করার প্রাকৃতিক উপায়?

উত্তরঃ পর্যাপ্ত পানি পান, তাজা ফল-মূল ও সবজি খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রাকৃতিকভাবে সাহায্য করতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা নয়।

প্রশ্নঃ শরীরে ইনফেকশন হলে কি হয়?

উত্তরঃ শরীরে ইনফেকশন হলে জ্বর, দুর্বলতা, ব্যথা, কাঁপুনি ও অস্বস্তি দেখা দেয়। ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে রক্তে মিশে গুরুতর অসুস্থতাও তৈরি করতে পারে।

প্রশ্নঃ রক্ত খারাপ হলে কি কি রোগ হয়?

উত্তরঃ রক্ত দূষিত বা খারাপ হলে চুলকানি, অ্যালার্জি, ব্রণ, গাঁটে ব্যথা, এবং লিভার বা কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

রক্তে ইনফেকশন হলে কি খাবার খেতে হয়

রক্তে ইনফেকশন হলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। তাই এই সময় এমন খাবার খেতে হয় যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সবচেয়ে আগে দরকার বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করা যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে। এরপর হালকা ও সহজপাচ্য খাবার যেমন সেদ্ধ ডাল, সেদ্ধ সবজি, নরম ভাত, খিচুড়ি, ও ডিমের সাদা অংশ খাওয়া ভালো। প্রোটিনের জন্য চিকেন স্যুপ, মাছ বা সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন।

তবে সবকিছুই কম মসলায় রান্না করতে হবে। এছাড়াও তাজা ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, কলা ও পেঁপে শরীরকে ভেতর থেকে শক্তি জোগায় এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। দুধ ও দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক হজমে সহায়তা করে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। এই ধরনের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন। একদম তেলে ভাজা, মসলাদার বা ঝাল খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। সঠিক খাবার ও বিশ্রামের মাধ্যমে রক্তে ইনফেকশন থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।

রক্তে ইনফেকশন হলে কোন ডাক্তার দেখাবো

রক্তে ইনফেকশন হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না ঠিক কোন ডাক্তার দেখানো উচিত। এই ধরণের সমস্যায় প্রথমেই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা সাধারণ চিকিৎসক (General Physician) এর শরণাপন্ন হওয়া ভালো। কারণ তাঁরা প্রাথমিকভাবে রক্ত পরীক্ষা করে ইনফেকশনের ধরন বুঝতে পারেন এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা শুরু করেন। কারণ তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করলে এটা বড় আকার ধারণ করতে পারে।


যদি রোগী খুব দুর্বল হয় বা অবস্থা জটিল হয় তাহলে তাঁরা রোগীকে ইনফেকশন ডিজিজ স্পেশালিস্ট অথবা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) পাঠাতে পারেন। বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে কিডনি, ফুসফুস বা লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে সেক্ষেত্রে মাল্টিস্পেশালিস্ট টিমের প্রয়োজন হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে কাছাকাছি ভালো হাসপাতাল বা অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখানোই সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত।

রক্তে ইনফেকশন হলে কি ঔষধ খেতে হবে

রক্তে ইনফেকশন হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সঠিক রোগ নির্ণয়। কারণ ওষুধ দেওয়া হয় কোন জীবাণু শরীরে সংক্রমণ করেছে তার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণুর ধরন বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। যেমন কিছু ক্ষেত্রে ইনজেকশন বা বড়ি আকারে ceftriaxone, azithromycin, ciprofloxacin ইত্যাদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। 

তবে প্রতিটি রোগীর রোগের লক্ষণ আলাদা আলাদা হয়। তাই কোনোভাবেই নিজের থেকে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ভুল ওষুধ খেলে ইনফেকশন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শরীরের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল, পানি শূন্যতা রোধে স্যালাইন ও দরকার হলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও চিকিৎসক দিতে পারেন। তাই রক্তে ইনফেকশনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষার ভিত্তিতে ওষুধ খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

রক্তে ইনফেকশন হলে কি রোগ হয়

রক্তে ইনফেকশন হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি থেকে সেপসিস নামে একটি গুরুতর রোগ হতে পারে। সেপসিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর নিজেই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজের অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে ফেলে। এ অবস্থায় কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং হার্টের কার্যকারিতা নষ্ট হতে শুরু করে। যাকে বলে মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর। 

অনেক সময় এই ইনফেকশন থেকে সেপটিক শক নামের ভয়ানক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে রক্তচাপ খুব কমে যায় এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয় তাহলে এটি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। তাই রক্তে ইনফেকশন কোনো সাধারণ জ্বর নয় এটি থেকে গুরুতর রোগ হতে পারে যার জন্য প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসা এবং সচেতনতা।

রক্তে ইনফেকশন হলে কি মানুষ মারা যায়

হ্যাঁ, রক্তে ইনফেকশন যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে জীবন হারানোর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সেটা হয় অবহেলা আর দেরির কারণে। এই রোগ প্রথমে ছোট কিছু উপসর্গ দিয়ে শুরু হয় যেমন-জ্বর, দুর্বলতা, কাঁপুনি। যা আমরা অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতা বলে ভুল করি। কিন্তু যখন জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে তখন শরীরের ভেতরে শুরু হয় এক ভয়ংকর যুদ্ধ। 

আর সেই যুদ্ধে শরীর যদি একা পড়ে যায় তাহলে অনেক সময় হেরে যায়। তখনই আসে ঝুঁকির সময়। অঙ্গ বিকল হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, এমনকি মৃত্যুও। তবে একটা সত্য হলো, সময়মতো চিকিৎসা নিলে এই যুদ্ধ আমরা জিততেও পারি। আজকের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাই ভয় নয় বরং সচেতনতা আর সময়মতো ব্যবস্থা নেয়াটাই জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

সম-সাময়িক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ কি খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়?

উত্তরঃ বিশুদ্ধ পানি, তাজা ফল (যেমন আপেল, লেবু, পেঁপে), সবুজ শাকসবজি, রসুন ও হলুদের মতো প্রাকৃতিক উপাদান নিয়মিত খেলে রক্ত ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে সাহায্য করে।

প্রশ্নঃ নবজাতকের ব্লাড ইনফেকশন কেন হয়?

উত্তরঃ নবজাতকের রক্তে ইনফেকশন হয় যদি জন্মের সময় বা পরে জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। যেমনঃ মায়ের সংক্রমণ, অপরিচ্ছন্ন ডেলিভারি পরিবেশ বা নবজাতকের যত্নে অবহেলা।

প্রশ্নঃ রক্তে ESR বাড়লে কি হয়?

উত্তরঃ ESR (Erythrocyte Sedimentation Rate) বাড়া মানে শরীরে কোনো ইনফেকশন বা প্রদাহ আছে। যেমনঃ জ্বর, বাতজ্বর, সংক্রমণ বা দীর্ঘমেয়াদী রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

প্রশ্নঃ ব্লাড ইনফেকশন কি?

উত্তরঃ ব্লাড ইনফেকশন বা সেপসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে এবং জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

প্রশ্নঃ Septic shock এর বাংলা অর্থ কি?

উত্তরঃ Septic shock-এর বাংলা অর্থ হলো সেপটিক ধাক্কা। যা রক্তে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে রক্তচাপ খুব কমে যাওয়ার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যাওয়া বোঝায়।

লেখকের মন্তব্যঃ রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয়

রক্তে ইনফেকশন হলে কি করনীয়তা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। রক্তে ইনফেকশন কোনো সাধারণ অসুখ নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা। যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকাটাই সবচেয়ে বড় করণীয়। শরীরে অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ঘরোয়া ভুল চিকিৎসা এড়িয়ে চলা আমাদের রক্ষা করতে পারে এই মারাত্মক বিপদ থেকে। মনে রাখতে হবে রক্তে ইনফেকশন প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য। শুধু দরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি পাঠকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে নিজে সচেতন হোন পরিবারের সবাইকে সচেতন করুন। কারণ সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা এই রোগের সমাধান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url