বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ- সতর্ক হোন এখনই
Bongo Tips IT ✅
৭ জুল, ২০২৫
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ সে সম্পর্কে আপনারা অনেকেই গুগলে
সার্চ করে থাকেন। ঘুমের মধ্যে বাচ্চা হঠাৎ কেঁপে ওঠে বা ঝাঁকুনি দেয়, অনেক
মা-বাবাই এটা দেখে ভয় পান। এটা কি স্বাভাবিক, নাকি লুকিয়ে আছে কোনো
স্বাস্থ্যঝুঁকি। শিশুর ঘুমে ঝাঁকুনি কেন হয়, কখন চিন্তা করতে হবে, আর কখন নয় তা
জানা খুবই দরকার।
কারণ ছোট একটা লক্ষণ হতে পারে বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত। আজকের আর্টিকেলে আমরা
সহজভাবে জানাবো এর পেছনের কারণগুলো। শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন কখন
আপনার সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি আর কখন আপনার বাচ্চার জন্য এটা
স্বাভাবিক।
পেজ সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ তা সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানা
উচিত। অনেক সময় মা-বাবারা লক্ষ্য করেন যে বাচ্চা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কেঁপে ওঠে
বা ঝাঁকুনি দেয়। এটা দেখে অনেকেই ভয় পান। ভাবেন হয়তো সন্তান অসুস্থ। কিন্তু সবসময়
এটা ভয় পাওয়ার মতো কিছু নয়। বেশিরভাগ সময় এটি স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্নায়বিক
কার্যক্রমের একটি অংশ। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
তাই এমন হলে বিষয়টা বুঝে নেওয়া খুব দরকার।
নবজাতক ও ছোট শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ছোটবেলায় পুরোপুরি পরিপক্ক হয়না। ফলে
ঘুমের সময় তাদের মস্তিষ্ক ও পেশির মধ্যে সমন্বয় ঠিকঠাক কাজ না করায় ঝাঁকুনি
দেখা দিতে পারে। এটা সাধারণত ২-৩ মাস বয়সে বেশি দেখা যায়।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে হাত বা পা লাফিয়ে ওঠা, এটিকে বলে মাইওক্লোনিক
জার্ক। বড়দের মধ্যেও এটা হয় কিন্তু বাচ্চাদের মাঝে এটা বেশি দেখা যায়। এটি
সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
ঘুমের মধ্যে যদি কোন শিশু স্বপ্ন দেখায় এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে
না পারে তাহলে তার ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি হতে পারে।
বাচ্চা যদি সারাদিন বেশি খেলাধুলা করে বা পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমায়, তাহলে
তার মস্তিষ্ক অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে ঘুমের সময় দেহে হালকা কাঁপুনি
বা ঝাঁকুনি হতে পারে।
শিশুর খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি না থাকলে পেশিতে ঝাঁকুনি হতে পারে। বিশেষ করে
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি এমন সমস্যার কারণ হতে পারে।
কখনো কখনো শিশুর দেহে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শুরু হলে ঘুমের
মধ্যে অস্বাভাবিক কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি দেখা যায়। সঙ্গে জ্বর, বমি বা দুর্বলতা
থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি প্রতিদিনই ঘুমের মধ্যে তীব্র ঝাঁকুনি হয় এবং বাচ্চা সজাগ হয়ে যায় বা অন্য
উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে এটি নিউরোলোজিকাল সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এক্ষেত্রে
দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অনেক সময় বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে যায়, যার ফলে তাদের
শরীরে হঠাৎ ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে। তারা কেঁপে ওঠে, মৃদু কান্না করে বা
মা-বাবার খোঁজ করতে পারে। এটি খুব সাধারণ, তবে বাচ্চাকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে
মানসিক প্রশান্তি দেওয়া দরকার।
দিনের বেলা বাচ্চারা অনেক সময় ধরে মোবাইল বা টিভি দেখলে বাচ্চার মস্তিষ্ক
অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে ঘুমের মধ্যে। যার কারণে ঝাঁকুনি
হতে পারে। তাই ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে এসব থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখা উচিত।
বাচ্চার ঘুমের ঘরে যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম থাকে কিংবা আশপাশে শব্দ হয়।
তাহলে শিশুর ঘুম ভেঙে গিয়ে শিশুর শরীরে হঠাৎ ঝাঁকুনি দিতে পারে। এমন পরিবেশ
শিশুর সুন্দর ঘুমের মান নষ্ট করে।
যদি শিশুর ওপর কোনো মানসিক চাপ থাকে। যেমন স্কুলে বকাঝকা, ভয় বা পারিবারিক
অশান্তি, সেটার প্রভাব ঘুমের মধ্যেও পড়ে। তাদের ঘুমে অস্থিরতা ও ঝাঁকুনির
মাধ্যমে সেই চাপ প্রকাশ পেতে পারে।
দিনের বেলা পর্যাপ্ত পানি না খেলে বা শিশুর শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে রাতে
ঘুমের সময় পেশি সংকোচন হতে পারে। এতে হঠাৎ ঝাঁকুনি বা ব্যথা হতে পারে।
খুব কম সংখ্যক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শিশুর মস্তিষ্কের গঠন বা স্নায়ুর
কার্যক্রম জন্ম থেকেই ঠিকঠাক থাকে না তাই ঘুমে অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি দেখা যায়।
তবে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত অন্য উপসর্গের সঙ্গেই বেশি প্রকাশ পায়।
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠে কেন
তুমি কি কখনো ঘুমের সময় হঠাৎ করে শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠে গিয়েছো? বা বাচ্চাদের
ঘুমের মধ্যে এমন আচরণ দেখেছো? এটা অনেক সময় অস্বাভাবিক মনে হলেও আসলে এটি একটি
সাধারণ শারীরিক ঘটনা, যার নাম হিপনিক জার্ক (Hypnic jerk)। ঘুমের প্রথম পর্যায়ে মস্তিষ্ক এবং শরীর ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে। কিন্তু
মস্তিষ্ক মাঝে মাঝে ভুলবশত ভাবতে পারে যে আমরা কোথাও পড়ে যাচ্ছি বা ভারসাম্য
হারাচ্ছি। তখন শরীর reflex হিসেবে হঠাৎ কেঁপে উঠে বা ঝাঁকি দেয়।
এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘুমের অংশ হিসেবে দেখা
যায়। তবে অতিরিক্ত ক্লান্তি, মানসিক চাপ, বেশি ক্যাফেইন সেবন, পর্যাপ্ত ঘুম না
পাওয়া, কিংবা বেশি মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিন দেখার কারণে এই ঝাঁকুনি বাড়তে
পারে। যদি এই সমস্যা খুব বেশি হয়, ঘুমের বাধা দেয় বা অন্য কোনও লক্ষণ যেমন
বারবার ঘুম ভাঙা, চুলকানি, অথবা ঘুমের অভাবের মত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন
বাচ্চা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চমকে উঠে কান্না শুরু করে বা কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে
তাকিয়ে থাকে। এমন অভিজ্ঞতা অনেক মা-বাবারই হয়ে থাকে। এটা দেখে ভয় পাওয়াটা
স্বাভাবিক। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে, ছোট শিশুদের মধ্যে এমনটা খুব সাধারণ। এই
আচরণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে মোরো রিফ্লেক্স বা স্টার্টল রিফ্লেক্স বলা হয়। যা সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাস বয়সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
শিশুরা তখনও পুরোপুরি মানসিক ও স্নায়বিকভাবে পরিপক্ক হয় না। তাই ঘুমের মাঝখানে
মস্তিষ্ক কোনো আকস্মিক শব্দ, আলো বা নড়াচড়াকে হুমকি হিসেবে ধরে নেয়।
এর ফলেই তাদের দেহ হঠাৎ কেঁপে ওঠে বা হাত-পা ছুঁড়ে দেয়। এই চমকে ওঠা অনেক সময় খুব
সাধারণ কারণেও হতে পারে। যেমনঃ আশেপাশে হঠাৎ কোনো শব্দ হলে, শিশু হালকা পেটের
গ্যাসে অস্বস্তি অনুভব করলে, পিঠে সঠিকভাবে না শোওয়ালে, শিশুর ঘুমের পোশাক বা
বিছানা অস্বস্তিকর হলে ইত্যাদি। এমন আচরণ শিশুর জন্য বিপজ্জনক নয় বরং তার
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্নায়ু বিকাশেরই একটি লক্ষণ। তবে যদি এই চমকে ওঠা অত্যন্ত ঘন
ঘন ঘটে এবং বাচ্চা কান্না থামাতে না পারে বা ঘুমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে তবে তা
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো ভালো।
ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয় কেন
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা বা দম বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া অনেকের
জন্যই আতঙ্কের বিষয়। এই সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে ঘুমের সময় একজন মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস
সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় বা স্বাভাবিকভাবে চলতে ব্যর্থ হয়। মূলত ঘুমের সময় গলার
পেশিগুলো অতিরিক্ত শিথিল হয়ে গেলে তা শ্বাসনালীকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে আটকে
দিতে পারে। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং মস্তিষ্ক তা বুঝতে পেরে
ঘুম ভেঙে দেয়।
অতিরিক্ত ওজন, নাক বন্ধ থাকা, গলার পেশি দুর্বল হওয়া, ধূমপান বা অ্যালার্জি এই
সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেক সময় রাতে নাক ডাকা, ঘন ঘন ঘুম ভাঙা, সকালে মাথাব্যথা
বা সারাদিন ক্লান্তিভাব থেকেও এই সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যদি কেউ নিয়মিত ঘুমের
মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা অনুভব করেন তাহলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা
অন্যান্য জটিল সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ঘুুমের মধ্যে কথা বলা কিসের লক্ষণ
ঘুমের মধ্যে কথা বলা অনেক সময়ই আশেপাশের মানুষকে বিস্মিত করে ফেলে। কেউ কেউ ঘুমে
স্পষ্ট কথা বলে, কেউ আবার অস্পষ্ট শব্দ করে। এটা দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে ভাবেন এটা
কি কোনো মানসিক সমস্যা। আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থাকে বলা হয় সোমনিলোকুই (Somniloquy) এবং এটি সাধারণত ক্ষতিকর কিছু নয়। ঘুমের মধ্যে কথা বলা মূলত তখনই হয়, যখন কেউ
গভীর ঘুম বা REM (Rapid Eye Movement) ঘুমের ধাপে থাকে এবং মস্তিষ্ক আংশিকভাবে
সক্রিয় থাকে।
সাধারণত অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, জ্বর, ক্লান্তি বা ঘুমের
রুটিনে অনিয়ম থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুব সাধারণ
এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি কমে যায়। তবে যদি ঘন ঘন কথা বলা হয়, সঙ্গে ঘুম ভাঙা,
হাঁটাহাঁটি বা ভয় পাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায় তাহলে সেটা হতে পারে স্লিপ ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। তবে একা একা কথা বললেও
যদি ঘুমের মান ভালো থাকে এবং শরীর-মন স্বাভাবিক কাজ করে তাহলে এটি নিয়ে চিন্তার
কিছু নেই।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শরীর কাঁপতে শুরু করা, হাত-পা টান টান হয়ে যাওয়া কিংবা
অনিয়ন্ত্রিতভাবে দেহ ঝাঁকিয়ে ওঠাৎ এসবই হতে পারে ঘুমজনিত খিঁচুনির লক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি নোকটার্নাল সিজার (Nocturnal Seizure) নামে পরিচিত। এই খিঁচুনি সাধারণত এপিলেপ্সি (মৃগী রোগ) এর একটি ধরন, যা ঘুমের সময় দেখা দেয়। অনেক সময় মানুষ বুঝতেও পারে না যে রাতে তার
খিঁচুনি হয়েছে। তবে সকালে জেগে উঠে শরীর ব্যথা, বিছানা এলোমেলো বা মুখে কামড়ের
দাগ পেলে তা হতে পারে গোপন খিঁচুনির ইঙ্গিত।
এ ছাড়া ঘুমের সময় দাঁত কিড়মিড় করা, চোখ উপরের দিকে উঠে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
বা শ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। শিশু ও
প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত জেনেটিক কারণ,
মস্তিষ্কের কোনো সমস্যাজনিত কারণ, মাথায় আঘাত বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে এ
ধরনের খিঁচুনি হতে পারে। ঘন ঘন এমন হলে অবশ্যই নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ওষুধ ও লাইফস্টাইল
ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ?
উত্তরঃ ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি সাধারণত হিপনিক জার্ক নামে পরিচিত, যা
ক্লান্তি, স্ট্রেস বা অনিয়মিত ঘুমের কারণে হতে পারে।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দেয় কেন?
উত্তরঃ মস্তিষ্ক যখন ঘুমের প্রথম ধাপে চলে, তখন ভুলবশত ভাবতে পারে
শরীর পড়ে যাচ্ছে, তাই ঝাঁকুনি দিয়ে শরীরকে সতর্ক করে।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে কি খিচুনি হয়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ঘুমের মধ্যে কখনো খিঁচুনি বা সিজার দেখা দিতে
পারে, যা এপিলেপ্সি বা স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি নিয়ে কি চিন্তিত হওয়া উচিত?
উত্তরঃ যদি কাঁপুনি বেশি হয়, ঘুম ভেঙে যায় বা অন্য উপসর্গ থাকে,
তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি হলে কি খিচুনি হতে পারে?
উত্তরঃ ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি অনেক সময় হিপনিক জার্ক হলেও বারবার এবং
গুরুতর হলে সেটি খিঁচুনির লক্ষণও হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট কোন রোগের লক্ষণ
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া বা দম বন্ধ হয়ে আসা একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা
হতে পারে। এটা কেবল ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় না বরং হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) নামক রোগের স্পষ্ট লক্ষণ। এই রোগে ঘুমের সময় গলার পেশি শিথিল হয়ে গিয়ে
শ্বাসনালিকে আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়, ফলে কিছু সময়ের জন্য দম আটকে আসে।
অনেক সময় রোগী নিজের অজান্তেই ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে হাপাতে থাকে বা গলার স্বরে
শব্দ হয়। অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অ্যালার্জি বা নাকের বিভিন্ন
সমস্যাও এই অবস্থার কারণ হতে পারে।
দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্লান্তিভাব, ও স্মৃতিশক্তি
হ্রাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও টনসিল বড় হওয়া বা নাক বন্ধ
থাকলে ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। তাই যদি নিয়মিত ঘুমের মধ্যে দম আটকে
আসার মতো সমস্যা হয়, নাক ডাকার আওয়াজ বেশি হয় কিংবা সকালে মাথা ভার লাগার মতো
অনুভূতি হয় তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো শনাক্ত ও
চিকিৎসা হলে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব।
ঘুমের মধ্যে বোবা ধরে কেন
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘাড়ে, হাতে-পায়ে চাপ অনুভব করা, চিৎকার করতে গিয়ে মুখে শব্দ না
আসা বা শরীর নড়াতে না পারার অভিজ্ঞতা অনেকেই অনুভব করেছেন। এই অবস্থাকে
সাধারণভাবে বোবা ধরা বলা
হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম Sleep Paralysis বা ঘুমজনিত পক্ষাঘাত। এটি তখনই ঘটে যখন কেউ ঘুম থেকে জাগার সময় বা ঘুমাতে
যাওয়ার মুহূর্তে শরীর পুরোপুরি জাগ্রত না হয়ে অচল হয়ে থাকে। মানে, মস্তিষ্ক জেগে
গেলেও শরীর তখনও ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। এর ফলে আমরা নড়তে পারি না, মুখ দিয়ে আওয়াজ
বের হয় না, এমনকি অনেক সময় মনে হয় কেউ গলা চেপে ধরছে বা পাশে কেউ দাঁড়িয়ে
আছে।
এটি অনেক ভয়ানক মনে হলেও সাধারণত ক্ষতিকর নয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস, ঘুমের অনিয়ম,
পিঠের দিকে ঘুমানো বা অতিরিক্ত ক্লান্তি এই সমস্যার মূল কারণ হতে পারে। কারও কারও
ক্ষেত্রে এটি মাঝে মাঝে ঘটে, আবার কেউ নিয়মিত এর মুখোমুখি হন। তবে ঘন ঘন এমন হলে
ঘুমের গুণমান পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই
ভালো। নিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, এবং সঠিক ঘুমের ভঙ্গি মেনে চললে এই সমস্যাকে
অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ঘুমের মধ্যে শরীর কাপে কেন
ঘুমানোর সময় অনেক সময় হঠাৎ শরীর কাঁপে বা ঝাঁকুনি দেয়। এটা দেখতে ভয় লাগলেও বেশ
সাধারণ ঘটনা। মস্তিষ্ক যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন কখনো ভুলবশত ভাবতে পারে
আমরা পড়ে যাচ্ছি বা বিপদে আছি। তখন শরীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ ঝাঁকুনি
দেয়। একে বলা হয় হিপনিক জার্ক। এটি কোনো অসুস্থতার চিহ্ন নয় বরং আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থা।
তবে যদি দিনে বেশি ক্লান্তি হয়, মানসিক চাপ থাকে, অথবা রাতে অনেক ক্যাফেইন নেওয়া
হয়, তাহলে এই ঝাঁকুনি বেশি হতে পারে। এছাড়া অনিয়মিত ঘুমের রুটিনও এর কারণ হতে
পারে। বেশিরভাগ সময় এই সমস্যা নিজে থেকেই কমে যায়। তবে খুব বেশি হলে ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া ভালো। ঘুমের আগে একটু বিশ্রাম নিন, স্ক্রিন টাইম কমান, আর ক্যাফেইন
কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো সাহায্য করবে ঝাঁকুনি কমাতে।
ঘুমের মধ্যে পা ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
ঘুমের সময় পা হঠাৎ ঝাঁকুনি দেওয়া বা কেঁপে ওঠা অনেকেরই সমস্যা হতে পারে। যা
সাধারণত শরীরের কিছু শারীরিক বা মানসিক কারণে ঘটে। এটা হতে পারে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম (Restless Leg Syndrome) এর লক্ষণ। যেখানে পায়ে অস্বস্তি, জ্বালা বা ঝাঁকুনি অনুভূত হয় এবং
বাচ্চাদের বা বড়দের ঘুম নষ্ট হয়। এছাড়া পায়ে রক্তের সঠিক চলাচল না হওয়া, খনিজ
যেমন- আয়রন বা ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে
থাকার পরেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিছু সময় স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অনিয়মিত ঘুমের রুটিনও পা ঝাঁকুনি
বাড়িয়ে দেয়। যদি পা ঝাঁকুনি খুব ঘন ঘন হয়, রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয় বা দিনের মধ্যে
ক্লান্তি দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম,
পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো
সম্ভব। তাই অবশ্যই খেয়াল করবেন ঘুমের মধ্যে পা ঝাঁকুনি হচ্ছে কিনা
অথবা সমস্যা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
হিপনিক জার্ক কেন হয়
হিপনিক জার্ক হলো ঘুমানোর সময় হঠাৎ শরীরের অচেতনভাবে কাঁপা বা ঝাঁকুনি দেওয়া। এটা
খুবই সাধারণ একটি ঘটনা, যা প্রায় সবাই কখনো না কখনো অনুভব করে থাকি। মস্তিষ্ক যখন
ঘুমের প্রাথমিক স্তরে চলে যায়, তখন এটি মাঝে মাঝে ভুলবশত বুঝতে পারে যে আমরা পড়ে
যাচ্ছি বা বিপদে পড়েছি। তখন শরীরের পেশি অটোমেটিক্যালি সংকুচিত হয়ে হঠাৎ কেঁপে
ওঠে, যাকে হিপনিক জার্ক বলা হয়।
অতিরিক্ত ক্লান্তি, স্ট্রেস, ক্যাফেইন সেবন বা অনিয়মিত ঘুম এই ঝাঁকুনির মাত্রা
বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও এটি ভয়ঙ্কর নয়, তবে যদি খুব বেশি ঘটে বা ঘুম ব্যাহত হয়
তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হিপনিক জার্ক সাধারণত শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং এটি আমাদের শরীরকে সুরক্ষা দেয়ার একটি প্রক্রিয়া
হিসেবে কাজ করে। তাই অবশ্যই সুস্থ থাকার জন্য এবং বাচ্চাকে সুস্থ রাখার
জন্য নিয়মিত ও আরামদায়ক ঘুম অপরিহার্য।
হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তির উপায়
হিপনিক জার্ক অর্থাৎ ঘুমানোর সময় হঠাৎ শরীর কাঁপা বেশ বিরক্তিকর হলেও
কিছু নিয়ম মেনে চললে বা অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি
পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মমতো এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
রাতে ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় যেমন- চা, কফি বা ঠাণ্ডা পানীয় এড়িয়ে চলা
উচিত। কারণ এগুলো স্নায়ুকে উত্তেজিত করে ঝাঁকুনি বাড়াতে পারে। দিনের মধ্যে
অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করা খুব উপকারী।
ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি কিংবা অন্য কোনো স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, আরামদায়ক ও
শান্ত পরিবেশে শোওয়া হিপনিক জার্ক কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের পুষ্টির দিকেও
নজর দেওয়া দরকার। যেমনঃ পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকা। যদি
হিপনিক জার্ক অতিরিক্ত হয় এবং ঘুমে বাধা দেয় তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো মেনে চললে হিপনিক জার্কের সমস্যা
অনেকাংশেই কমানো যায় এবং ঘুমের মান ভালো হয়।
সমসাময়িক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ বাচ্চাদের কি ঘুমের মধ্যে খিচুনি হতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বাচ্চাদেরও ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি বা সিজার হতে পারে
যা স্নায়ুবিক বা অন্যান্য চিকিৎসাজনিত কারণে হতে পারে।
প্রশ্নঃ বাচ্চাদের ঘুমের খিঁচুনি কেমন দেখায়?
উত্তরঃ বাচ্চা ঘুমে অচেতন হয়ে হাত-পা কেঁপে উঠতে পারে, কখনো মুখে
অস্বাভাবিক ভাব প্রকাশ পায় বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি বন্ধ করার উপায়?
উত্তরঃ নিয়মিত ঘুমান, স্ট্রেস কমান, ক্যাফেইন কম খান এবং
বিশ্রামজনক পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
প্রশ্নঃ ঘুমের মধ্যে কাঁপা মানে কি স্বপ্ন?
উত্তরঃ না, ঘুমের মধ্যে কাঁপা সাধারণত স্বপ্নের কারণে নয় বরং
হিপনিক জার্ক বা স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার ফল।
প্রশ্নঃ কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি হয়?
উত্তরঃ আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাবে
ঘুমের মধ্যে কাঁপুনি হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্যঃ বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ তা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দেখা অনেক সময়
বাবা-মায়ের জন্য চিন্তার কারণ হয়। আসলে ছোট শিশুরা যখন ঘুমের প্রথম ধাপে প্রবেশ
করে তখন তাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র পুরোপুরি পরিপক্ক হয় না। ফলে তারা হঠাৎ
করে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক এবং বিপদজনক নয়। তবে যদি এই
ঝাঁকুনি অতিরিক্ত হয়, শিশুর ঘুম বিঘ্নিত করে বা সঙ্গে অন্য কোনো অসাধারণ লক্ষণ
থাকে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
অতএব বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি প্রাথমিকভাবে একটি স্বাভাবিক শারীরিক
প্রতিক্রিয়া হলেও প্রয়োজন হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়াই তাদের সুস্থ ও নিরাপদ
ঘুম নিশ্চিত করবে। বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো সন্তানের ঘুমের পরিবেশ
আরামদায়ক রাখা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া। এতে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো
থাকবে এবং তারা সুশৃঙ্খলভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। ধন্যবাদ এতক্ষণ সঙ্গে থাকার
জন্য। আইডি নং-250602
বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url