গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই গুগল এ সার্চ করে
থাকেন। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবারে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। আর
বিটরুট হতে পারে এক চমৎকার প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনার শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা
পূরণে সহায়তা করবে। এতে থাকা আয়রন, ফলেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে করে তোলে
শক্তিশালী ও সুস্থ।
বিটরুট শুধু মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করে না, শিশুর মস্তিষ্ক ও দেহের গঠনেও সহায়তা
করে। এছাড়া এটি হজমে সাহায্য করে ও প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আজকের
আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার আরও বিস্ময়কর
উপকারিতা।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থা এক বিশেষ সময় যখন
একজন মায়ের নিজের শরীরের পাশাপাশি গর্ভের শিশুর যত্ন নেওয়াও খুব দরকার। এই সময়ে
এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং শরীরকে ভেতর থেকে শক্তি
জোগায়। বিটরুট এমনই এক প্রাকৃতিক সবজি, যা আয়রন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যে আরো বিস্তারিতভাবে গর্ভাবস্থায় বিটরুট
খাওয়ার উপকারিতা দেওয়া হল-
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের শরীরে আয়রনের
ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হয়। বিটরুটে প্রাকৃতিক
আয়রন থাকে যা রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। নিয়মিত
বিটরুট খেলে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। ফলে মা ক্লান্তিবোধ কম অনুভব
করেন এবং শিশুর শরীরেও সঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ গর্ভাবস্থায় হাই ব্লাড প্রেশার অনেক
মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিটরুটে থাকা নাইট্রেট রক্তনালীগুলোকে আরাম
দেয় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এতে মা ও শিশু দুজনেই থাকে নিরাপদ
এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
হজম ভালো করেঃ গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ
একটি সমস্যা। বিটরুটে থাকে প্রচুর ফাইবার, যা খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে
এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এতে পেট ফাঁপা বা ভারী ভাব কমে, যার ফলে গর্ভবতী
মা অনেক ভালো অনুভব করে।
শিশুর স্নায়ুবিক বিকাশে সহায়কঃ বিটরুটে থাকা ফলেট (ফোলিক অ্যাসিড)
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। যা গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক ও
স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ফলেটের প্রয়োজনীয়তা
সবচেয়ে বেশি, আর বিটরুট তা সহজেই পূরণ করতে পারে। এটি শিশুকে জন্মগত ত্রুটি থেকে
রক্ষা করতেও সহায়ক।
শরীরকে শক্তি জোগায়ঃ প্রেগন্যান্সির সময় অনেকেই ক্লান্তি, ঘুমঘুম
ভাব এবং দুর্বলতা অনুভব করেন। বিটরুট প্রাকৃতিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এতে
থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে চাঙ্গা রাখে এবং দিনভর কাজে
মনোযোগ দিতে সহায়তা করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ গর্ভকালীন সময় মা'র শরীর দুর্বল হয়ে
পড়ে। ফলে নানা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সহজে আক্রমণ করতে পারে। বিটরুটে আছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য
করে। এতে মা কম অসুস্থ হন এবং শিশুও পায় নিরাপদ সুরক্ষা।
ত্বকের জন্য ভালোঃ অনেক মায়ের ত্বকে গর্ভাবস্থায় ব্রণ, র্যাশ বা
কালচে ভাব দেখা যায়। বিটরুটে থাকা পুষ্টিগুণ রক্ত পরিষ্কার করে এবং ত্বকে
প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা এনে দেয়। এটি ভেতর থেকে ত্বককে ভালো রাখে, ফলে মায়ের
চেহারাতেও ফুটে ওঠে এক আলাদা জেল্লা।
বিষাক্ত পদার্থ দূর করেনঃ বিটরুট শরীরের ভেতরের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ
দূর করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে লিভার পরিষ্কার রাখে। এই ডিটক্স প্রক্রিয়াটি
গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ পরিষ্কার শরীর মানেই ভালো হজম, ভালো ঘুম
এবং ভালো মন-মেজাজ।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন কিছু কিছু অপকারিতাও
রয়েছে। যদিও বিটরুট গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর একটি খাবার হিসেবে বিবেচিত, তবে কিছু
ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত। বিটরুটে থাকা অক্সালিক অ্যাসিড
অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে
যাদের কিডনির সমস্যা আগে থেকেই আছে। আবার, বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি থাক।
যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সমস্যা করতে
পারে। কারো কারো শরীরে এটি অ্যালার্জি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এছাড়া অতিরিক্ত বিটরুট খেলে প্রস্রাব ও মলের রং গোলাপি বা লালচে হতে পারে। যা
অনেক সময় ভয় পাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও এটা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তাই
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেতে হলে পরিমাণমতো খাওয়া উচিত ও ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে খাওয়াই নিরাপদ।
বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট একটি পুষ্টিকর সবজি যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি হলেও কিছু সতর্কতা মেনে
খাওয়া দরকার। এতে রয়েছে আয়রন, ফলেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। যা রক্ত
তৈরিতে, হজমে এবং রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত খেলে কিডনির সমস্যা,
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যালার্জি হতে পারে। তাই পরিমাণ বুঝে খাওয়া খুবই জরুরি।
সঠিকভাবে খেলে বিটরুট হতে পারে স্বাস্থ্যকর জীবনের সঙ্গী।
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
লিভার পরিষ্কার রাখেঃ লিভার আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা
খাবার হজম থেকে শুরু করে শরীরের নানা বিষাক্ত জিনিস ছেঁকে বের করে দেয়। বিটরুট
লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি বাইরের খাবার বেশি খান এবং হজম
করতে সমস্যা হয়। তখন বিটরুট লিভারকে তার কাজ আরো দ্রুত করতে সাহায্য করে,
যেন হজম তাড়াতাড়ি হয় এবং শরীরে বিষ জমে না থাকে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ অনেকের ত্বক ফ্যাকাশে দেখায় বা ব্রণের
সমস্যা থাকে। বিটরুট শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য
করে, যার ফলে রক্ত পরিষ্কার হয়। আর রক্ত পরিষ্কার থাকলে সেটা ত্বকে ফুটে ওঠে এবং
চেহারায় এক ধরনের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে। তাই বিটরুটকে অনেকেই ত্বকের বন্ধু
বলে থাকেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ যাদের ব্লাড প্রেশার একটু বেশি থাকে তারা
প্রায়ই ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিটরুট কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
সাহায্য করে। এর মধ্যে এক ধরনের উপাদান থাকে যা রক্তনালীকে আরাম দেয় এবং প্রেসার
কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত বিটরুট খেলে উচ্চ রক্তচাপ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক
রাখা যায়।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ বিটরুট এমন একটি খাবার যেটা রক্ত তৈরি করতে
দারুণ সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে বা রক্তশূন্যতা আছে
তাদের জন্য এটা খুবই উপকারী। আপনি যদি প্রায়ই দুর্বল থাকেন বা মাথা ঘোরে তাহলে
বিটরুট খেলে ধীরে ধীরে শরীর শক্তি পাবেন। কারণ এটা শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে
সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো খুবই দরকার। বিটরুটে আছে
ভিটামিন সি এবং নানা রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরকে ভাইরাস বা ইনফেকশনের
বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। সোজা কথায় বিটরুট খেলে আপনি সহজে অসুস্থ হবে
না।
হজমশক্তি ভালো রাখেঃ অনেকেই গ্যাস, পেট ফাঁপা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের
সমস্যায় ভোগে। বিটরুটে থাকে অনেক ফাইবার যা আমাদের হজমশক্তি ভালো রাখতে
সাহায্য করে। সহজভাবে বললে বিটরুট খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, খাবার হজম হয় সহজে,
আর পেট ব্যথা বা অস্বস্তি থেকে মুক্তি মেলে।
শরীরের শক্তি বাড়ায়ঃঅনেক সময় দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে উঠে একদমই কাজ করতে ইচ্ছা করে না, শরীর
একেবারে দুর্বল লাগে। বিটরুট কিন্তু এই অবস্থায় দারুণ কাজ করে। এতে এমন কিছু
প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা শরীরকে চটজলদি শক্তি দেয়। তাই দুপুরে বা সকালে এক গ্লাস
বিটরুটের জুস খেলে অনেকটাই চাঙ্গা অনুভব হয়।
বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা
বিটরুট খাওয়া যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা রয়েছে। তাই অবশ্যই এই
খাবার খাওয়ার আগে অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
যেন আমরা এই খাবারের পর্যাপ্ত পুষ্টিগুন আমাদের শরীরে গ্রহন করতে পারি। চলুন জেনে নেই বিটরুট খাওয়ার কিছু
অপকারিতা সম্পর্কে।
যাদের কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা আছে বা পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের
বেশি বিটরুট না খাওয়াই ভালো। কারণ বিটরুটে থাকে অক্সালেট, যা কিডনিতে পাথর
তৈরি করতে পারে।
বিটরুট যেমন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তেমনি যাদের প্রেসার আগে
থেকেই কম, তাদের ক্ষেত্রে এটা আরও নিচে নামিয়ে দিতে পারে। এতে মাথা ঘোরা
বা দুর্বল লাগার মত সমস্যা হতে পারে।
সব খাবার সবার শরীরে মানায় না। কিছু মানুষের বিটরুট খাওয়ার পর
গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বা অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই
প্রথমে অল্প করে খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখা জরুরি।
বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। যদিও এটি কৃত্রিম চিনি নয়, তবুও যাদের
ডায়াবেটিস আছে, তাদের নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ বুঝে খাওয়া উচিত।
অনেক সময় বিটরুট খাওয়ার পর প্রস্রাব বা মল লালচে হয়ে যায়, যেটা দেখে
অনেকে ভয় পান। আসলে এটি ক্ষতিকর নয় এর রং এর কারণে প্রসব করার সময়
প্রসাবের রঙ লালচে হয়।
কিভাবে ও কখন গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেতে চাইলে অবশ্যই তা সঠিক পদ্ধতিতে ও পরিমাণ বুঝে খাওয়া
উচিত। যাতে শরীর উপকার পায় এবং কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। সকালে নাস্তার পর
কিংবা দুপুরে খাবারের সঙ্গে বিটরুট খাওয়া সবচেয়ে ভালো সময়। এটি সেদ্ধ করে
খাওয়া নিরাপদ ও সহজে হজমযোগ্য হয়। চাইলে হালকা লবণ বা লেবুর রস দিয়েও খেতে
পারেন। অনেকে সালাদ হিসেবে বিটরুট খেতে পছন্দ করেন। যেখানে টমেটো, শসা, গাজরসহ
মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর ও রঙিন এক পদ সালাত তৈরি করা যায়।
তাজা বিটরুট দিয়ে তৈরি জুসও গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী। তবে দিনে আধা গ্লাসের
বেশি না খাওয়াই ভালো। চাইলে বিটরুটের রস ময়দায় মিশিয়ে রুটি তৈরি করা যায়
বা ভেজিটেবল খিচুড়িতে বিটরুট কুচি যোগ করেও খাওয়া যায়। এছাড়া স্মুদি বা হালকা
সুপ হিসেবেও বিটরুট খেতে পারেন। যা শরীর ঠান্ডা-গরম দুই মৌসুমেই উপকারে আসে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়া যেন না হয় এবং যাদের কিডনির
সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক বা ডায়াবেটিক আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে
খাওয়া শুরু করবেন।
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা কমাতে বিটরুটের ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বিশেষ করে যখন
মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থায় বিটরুট হতে পারে একটি
প্রাকৃতিক ও কার্যকর সমাধান। বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফলেট ও ভিটামিন সি
থাকে। যা শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন
বাড়ায়, আর ভিটামিন সি সেই আয়রন সহজে শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে।
ফলে রক্ত তৈরির প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়। বিটরুট খেলে শুধু রক্তশূন্যতা কমে
না, শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাবও কমে আসে। নিয়মিত পরিমাণমতো বিটরুট সেদ্ধ
করে বা জুস হিসেবে খেলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ে, শিশুও পায়
পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি। ফলে মা ও শিশু দুজনেই থাকে সুস্থ ও সবল। তাই
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা কমাতে আপনারা নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন।
সচারাচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ বিটরুটের অপকারিতা কি কি?
উত্তরঃ বেশি পরিমাণে বিটরুট খেলে পেটে গ্যাস, গ্যাস্ট্রিক বা
প্রস্রাবে লালচে রঙ দেখা যেতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথর বা শর্করার সমস্যা আছে
তাদের সাবধানে খাওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে কি প্রসাব লাল হয়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিটরুট খাওয়ার পর অনেকের প্রসাব বা মল লালচে হতে
পারে। যা স্বাভাবিক ও ক্ষতিকর নয়। এটা বিটরুটের প্রাকৃতিক রঙের কারণে হয়।
প্রশ্নঃ বিটরুট কখন খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ দুপুরে বা সকালে নাস্তার পর খাওয়া সবচেয়ে ভালো। খালি পেটে
না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
প্রশ্নঃ বিট কাঁচা না সিদ্ধ খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ দুটোই খাওয়া যায়। তবে সেদ্ধ বিটরুট হজমে সহজ এবং পেটে কম
চাপ পড়ে। কাঁচা বিটরুটে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। তবে কাঁচা বিটরুট ধীরে ধীরে
অল্প করে খাওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ বিটরুট কি বাচ্চারা খেতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিটরুট বাচ্চাদের জন্যও উপকারী। সেদ্ধ করে নরম করে
দিলে বাচ্চারা সহজে খেতে পারে এবং এতে রক্তশূন্যতা দূর হয় ও পুষ্টি
বাড়ে।
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে বিটরুট কীভাবে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
খুবই জরুরি। বিটরুট এমন এক প্রাকৃতিক সবজি যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ফলেট বা ফোলিক অ্যাসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের
গঠন সঠিকভাবে হতে সাহায্য করে। গর্ভের শুরুতেই স্নায়বিক টিউব (Neural Tube) গঠিত
হয়। যা পরবর্তীতে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। এ সময় ফলেটের
প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।
বিটরুটে থাকা আয়রন শিশুর মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে, ফলে সে
ভিতর থেকেই সবল ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। এ ছাড়া বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে
শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই পরিমিতভাবে বিটরুট খেলে মা যেমন
সুস্থ থাকেন তেমনি শিশুর বুদ্ধি ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হয় মজবুত ভিত্তির ওপর।
বিটরুটের জুস নাকি কাঁচা বিটরুট- কোনটি বেশি উপকারী
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা অনেক, তবে অনেকেই ভাবেন বিটরুটের জুস খাবো নাকি কাঁচা
বিটরুটই বেশি ভালো। আসলে দুটোতেই উপকার আছে, তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কাঁচা
বিটরুটে সব ধরনের পুষ্টি যেমন আয়রন, ফলেট, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
সম্পূর্ণভাবে থাকে। কারণ এতে কোনো প্রক্রিয়াজাতকরণ হয় না। এটি হজমে সময় নেয়,
তবে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়।
অন্যদিকে বিটরুটের জুস দ্রুত শরীরে শোষিত হয় ফলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়,
ক্লান্তি দূর হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও দ্রুত কাজ করে। তবে জুস বানাতে গিয়ে
অনেক সময় ফাইবার বাদ পড়ে যায়, যা হজমের জন্য উপকারী। তাই যদি কারও হজমের সমস্যা
থাকে বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে কাঁচা বা হালকা সেদ্ধ বিটরুট ভালো। আর যদি
দ্রুত এনার্জি পেতে চান বা সকালে ফ্রেশ থাকতে চান তাহলে বিটরুটের জুসও চমৎকার
একটি বিকল্প। সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিমাণ বুঝে দুটোই খাওয়া যায়। একদিন
কাঁচা, অন্যদিন জুস, তাহলেই শরীর পাবে পূর্ণ পুষ্টি ও উপকার।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট নিয়ে ডাক্তারদের মতামত
গর্ভাবস্থায় মা কী খাচ্ছেন সেটাই ঠিক করে দেয় ভবিষ্যতের শিশুর স্বাস্থ্য কেমন
হবে। ডাক্তারদের মতে বিটরুট এমন একটি খাবার যা পুষ্টিতে ভরপুর এবং গর্ভবতী নারীর
শরীরে প্রাকৃতিকভাবে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যখন রক্তস্বল্পতা দেখা
দেয় তখন বিটরুট হতে পারে কার্যকর একটি সহায়ক খাবার। অনেক গাইনী ডাক্তার বিটরুট
সেদ্ধ করে অথবা সালাদ হিসেবে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ এতে থাকে আয়রন,
ফলেট ও নানা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান।
তবে তারা এটাও বলেন যে বিটরুট যতই ভালো হোক অতিরিক্ত খাওয়া একদম ঠিক না। কেউ যদি
আগে থেকে কিডনির সমস্যায় ভোগেন বা ব্লাড সুগার অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে অবশ্যই
প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় রোগীর শরীর অনুযায়ী খাবারের
মানিয়ে নেওয়া ভিন্ন হয়। তাই নিজের শরীর বুঝে এবং ডাক্তারের গাইডলাইন অনুসরণ করে
বিটরুট খেলে মা যেমন ভালো থাকবেন তেমনি গর্ভে থাকা শিশুও পাবে নিরাপদ একটি
ভবিষ্যৎ।
বিটরুট দিয়ে তৈরি সহজ ও স্বাস্থ্যকর রেসিপি গর্ভবতীদের জন্য
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বিটরুট
দিয়ে তৈরি কিছু স্বাস্থ্যকর রেসিপি এই সময়ে হতে পারে চমৎকার এক সঙ্গী। অনেক মা
বিটরুট কাঁচা অবস্থায় খেতে পছন্দ করেন না, তাই তা একটু ভিন্নভাবে রেঁধে নিলে যেমন
স্বাদ বাড়ে তেমনি শরীরও পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি। আপনি চাইলে সেদ্ধ বিটরুট ছোট ছোট
কিউব করে কেটে টমেটো, শসা আর এক চিমটি লেবুর রস দিয়ে একটা হালকা সালাদ তৈরি করতে
পারেন। যেটা দুপুরে বা বিকেলের হালকা খাবার হিসেবে একদম পারফেক্ট। চাইলে বিটরুটের
সাথে ডাল মিশিয়ে সুস্বাদু খিচুড়ি রান্না করা যায়।
যা একদিকে পুষ্টিকর অন্যদিকে সহজপাচ্য। সকালে নাস্তার পর এক গ্লাস বিটরুট গাজরের
জুস খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরও চাঙা থাকে। আবার চাইলে বিটরুট স্মুদি, পরোটা
বা এমনকি হালকা বিটরুট সুপ করেও খেতে পারেন। এই সব রেসিপিগুলো মায়ের শরীরে আয়রন,
ফলেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠন ও রক্ত
তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে সহজ কিছু রেসিপির মাধ্যমে বিটরুটকে নিয়মিত
খাদ্য তালিকায় রাখলে গর্ভকালীন পুষ্টি নিশ্চিত করা যায় একেবারে স্বাভাবিক রান্নার
মাধ্যমেই।
বাংলাদেশের বিটরুটের দাম
বাংলাদেশে বিটরুট এখন অনেক জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর সবজি, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে
এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণত বাজারে বিটরুটের দাম মৌসুমি ও এলাকার উপর
নির্ভর করে কিছুটা কমবেশি হতে পারে। রাজধানী ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে প্রতি কেজি
বিটরুটের দাম গড়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বড় সুপার
শপগুলোতে এর দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। আর গ্রামাঞ্চলে বা
পাইকারি বাজারে এটি তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়, যেমন ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেই
পাওয়া যেতে পারে।
শীতকালে দাম কিছুটা কম থাকে, কারণ তখন দেশীয় উৎপাদন বেশি হয়, তবে বছরের অন্য
সময়গুলোতে আমদানি করা বিটরুট বাজারে আসে, তাই দামও কিছুটা বেড়ে যায়। যারা
স্বাস্থ্য সচেতন বা গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খুঁজছেন, তাদের জন্য বিটরুট একটি
সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর বিকল্প, যা সহজেই বাজারে পাওয়া যায় এবং রান্না করাও খুব সহজ।
তাই দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় বিটরুট রাখা যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি পকেটসচেতন
সিদ্ধান্তও বলা যায়।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সম্ভাব্য সতর্কতা ও পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া উপকারী হলেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি যাতে এটি
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর থাকে। যেহেতু বিটরুটে রয়েছে অক্সালেট নামের একটি উপাদান।
তাই যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আবার বিটরুট খাওয়ার পর প্রস্রাব বা মল লালচে হয়ে যেতে পারে যা অনেক সময় ভয়
ধরায়। কিন্তু এটি একদম স্বাভাবিক ও ক্ষতি করে না। এছাড়া বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি
থাকে তাই যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তাদের অবশ্যই পরিমাণ
বুঝে খাওয়া উচিত।
হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে কাঁচা বিটরুট খেলে কারও কারও পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে
পারে। তাই প্রথমে অল্প করে শুরু করে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখা ভালো। সবচেয়ে ভালো
হয় যদি সেদ্ধ করে সালাদে মিশিয়ে বা জুস বানিয়ে পরিমিতভাবে খাওয়া হয়। আর যদি আগে
থেকে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা বা
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, তাহলে গর্ভকালীন সময়ে বিটরুট খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
সম-সাময়িক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ প্রতিদিন বিটরুট খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, পরিমাণমতো প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত না
খাওয়াই ভালো।
প্রশ্নঃ বিটরুট কত টাকা কেজি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত বিটরুটের দাম প্রতি কেজি ১০০
থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়, সময় ও জায়গার ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ বিটরুট খেলে কি ফ্যাটি লিভার ভালো হয়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের ক্ষতি কমাতে
সাহায্য করে, তাই ফ্যাটি লিভারে উপকার পেতে পারেন।
প্রশ্নঃ বিটরুট খেলে কি ওজন কমে?
উত্তরঃ বিটরুটে ফাইবার বেশি থাকায় এটি ক্ষুধা কমায় এবং মেটাবলিজম
বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ বিট খেলে কি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিটরুটে থাকা ফাইবার হজম ভালো করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
কমাতে সাহায্য করে।
লেখক এর মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। একজন মা
হিসেবে গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন নেওয়া শুধু নিজের জন্য নয় গর্ভে থাকা শিশুটির
ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিটরুট এমন একটি প্রাকৃতিক খাবার যেটি আমি
নিজেও আমার সন্তানসম্ভবা অবস্থায় খাবারের তালিকায় রেখেছিলাম। এটি শুধু শরীরে
রক্ত বাড়ায় না বরং মায়ের ক্লান্তি দূর করে, হজমে সাহায্য করে এবং শিশুর
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠনেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তবে যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে যেমন সচেতন হওয়া দরকার। তেমনি বিটরুটের ক্ষেত্রেও
পরিমাণমতো এবং সঠিক উপায়ে খাওয়াটা খুবই জরুরি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি,
ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে বিটরুট খাওয়া হলে এটি গর্ভাবস্থার
পুষ্টিচাহিদা পূরণে এক দারুণ সহায়ক হতে পারে। প্রত্যেক মা যেন সুস্থ থাকেন,
সুন্দর একটি সন্তান জন্ম দেন এই শুভকামনায় আমার আজকের এই আর্টিকেলটি। আরো
নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ সঙ্গে
থাকার জন্য।
বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url